ভূমিকাঃ তরঙ্গ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আপনি যখন সাগরের ঢেউ দেখেন, শব্দ শুনেন, বা আলো অনুভব করেন, তখন আপনি মূলত তরঙ্গের প্রভাবের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তরঙ্গের এই বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি এবং এর বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব আমাদের চারপাশের অনেক প্রক্রিয়াকে পরিচালনা করে। এই ওয়েবপেজে, আমরা তরঙ্গের মূল বৈশিষ্ট্য, এর প্রকারভেদ এবং তরঙ্গের বিভিন্ন প্রকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাশিগুলোর বিশদ আলোচনা করব। এই জ্ঞান আপনার বিজ্ঞান বিষয়ক বোঝাপড়াকে আরও গভীর করবে এবং প্রকৃতির এই মহামূল্যবান প্রক্রিয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে।
তরঙ্গ | Wave
![]() |
চিত্রঃ পুকুরের পানিতে সৃষ্ট তরঙ্গ |
যে স্থানের পানির অণুগলো নিচের দিকে কম্পিত হয়, তার পরের স্থানের পানির অণুগুলো উপরের দিকে কম্পিত হয়। পরস্পর এই বিপরীতমুখী কম্পন পানির অণুর স্থানচ্যূতি না ঘটিয়ে আন্দোলন বা ঢেউ সৃষ্টি করে পাড়ের দিকে চলে যায়, যাকে আমরা তরঙ্গ বলে থাকি। যেহেতু পানির অণুগুলোর স্থানচ্যূতি হয় না তাই পানিতে ভাসমান বস্তুগুলো নিজের অবস্থানে রয়ে যায়। এখানে সৃষ্ট আন্দোলন হচ্ছে একটি পর্যাবৃত্ত আন্দোলন।
আমরা জানি পর্যাবৃত্ত আন্দোলনের মাধ্যমে কোনো শক্তি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। পানি হচ্ছে শক্তি স্থানান্তরের একটি মাধ্যম।
সংজ্ঞাঃ যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোনো মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে শক্তি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোর স্থানান্তর করে না তাকে তরঙ্গ বলে।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য
- মাধ্যমের কণার গতি পর্যাবৃত্ত গতি
- মাধ্যমের কণা স্থানান্তরিত হয় না, শুধুমাত্র আন্দোলন মাধ্যমের ভিতর দিয়ে তরঙ্গাকারে সঞ্চালিত হয়।
- মাধ্যমের কণাগুলোর বেগ বিভিন্ন হলেও তরঙ্গ বেগ একই থাকে।
- সকল তরঙ্গ তথ্য ও শক্তি সঞ্চারণ করে।
- তরঙ্গ সৃষ্টির জন্য মাধ্যমে কম্পনের প্রয়োজন হয়।
- এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তরঙ্গ সঞ্চালিত হতে সময়ের প্রয়োজন।
তরঙ্গের প্রকারভেদ
কম্পনের সাথে তরঙ্গ প্রবাহের দিকের তারতম্যভেদে তরঙ্গকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
- অনুপ্রস্থ তরঙ্গ | Transverse wave
- অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ | Longitudinal wave
অনুপ্রস্থ তরঙ্গ
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ
সংজ্ঞাঃ যে তরঙ্গ মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের দিকের সাথে সমান্তরালে অগ্রসর হয়, তাকে অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে।
তরঙ্গ সংশ্লিষ্ট রাশি
পূর্ণ স্পন্দন
পর্যায়কাল
কম্পাঙ্ক
তরঙ্গ সৃষ্টিকারী কোন কণা প্রতি একক সময়ে যতবার পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করে
তাকে কম্পাঙ্ক বলে। একে \(f\) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
যদি \(t\) সময়ে কোন কণা \(N\) সংখ্যক পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করে, তাহলে একক
সময়ে পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করে = \(\frac{N}{t}\) বার।
সুতরাং পর্যায়কাল, \(f = \frac{N}{t}\) .............. (1)
আবার, \(T\) সময়ে পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করে 1 বার
সুতরাং একক সময়ে পূর্ণ স্পন্দন সম্পন্ন করে = \(\frac{1}{T}\) বার
কম্পাঙ্ক, \(f =\frac{1}{T}\) .................. (2)
সমীকরণ (1) ও (2) থেকে পাই,
\(\frac{N}{t}=\frac{1}{T}\)
\(\therefore\) \(t=NT\)
সমীকরণ (1) ও (2) অনুসারে, কম্পাঙ্কের একক \(\frac{1}{s} = s^{-1}=
1Hz.\)
হার্জ
বিস্তার
তরঙ্গ দৈর্ঘ্য
অথবা, তরঙ্গের উপর অবস্থিত পর পর দুটি সমদশা সম্পন্ন কণার মধ্যবর্তী দূরত্বকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে। তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকেে \(\lambda\) দ্বারা প্রকাশ করা হয় বলে, চিত্রে একে \(\lambda\) দ্বারা খোনো হয়েছে। এর একক মিটার (m)।
চিত্র অনুসারে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য, \(\lambda\) = \(AC\) = \(A^{'}C^{'}\)
তরঙ্গ বেগ
তরঙ্গ বেগ, কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে সম্পর্ক
\(T\) সময়ে তরঙ্গ অতিক্রম করে \(\lambda\) দূরত্ব
একক সময়ে তরঙ্গ অতিক্রম করে \(\frac{\lambda}{T}\)
একক সময়ে তরঙ্গ যে
দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বলে। অর্থাৎ
\(v=\frac{\lambda}{T}\) .......... (1)
আবার, \(T\) সময়ে পূর্ণ
কম্পন সম্পন্ন করে 1 বার
একক সময়ে তরঙ্গ পূর্ণ কম্পন সম্পন্ন করে \(\frac{1}{T}\)বার
\(\therefore\)
কম্পাঙ্ক, \(f=\frac{1}{T}\) ........... (2)
সমীকরণ (1) কে (2) দ্বারা
ভাগ করে পাই,
\(\frac{v}{f}=\frac{\frac{\lambda}{T}}{\frac{1}{T}}\)
বা,
\(\frac{v}{f}=\frac{\lambda}{T}\times\frac{T}{1}\)
বা, \(\therefore\)
\(v=f\lambda\)
এই সমীকরণই তরঙ্গ বেগ, কম্পাংঙ্ক ও তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে
সম্পর্ক নির্দেশ করে।
উপসংহারঃ তরঙ্গের বিভিন্ন প্রকার এবং বৈশিষ্ট্যগুলো বিজ্ঞানের জগতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসংখ্য প্রভাব ফেলে। তরঙ্গের গতি, প্রকারভেদ, এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট রাশি সম্পর্কে বোঝাপড়া আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রকৃতির অজানা রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়ক হয়। এই ওয়েবপেজের আলোচনা তরঙ্গের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও প্রয়োগ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করেছে, যা ভবিষ্যতের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য একটি ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।