ভূমিকা
আধান (Charge) একটি মৌলিক পদার্থবিজ্ঞানীয় ধারণা যা তড়িৎ প্রবাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আধানের একক হল কুলম্ব (Coulomb), যা বিদ্যুৎ শক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে সাহায্য করে। আধান দুই ধরনের হতে পারে—ধনাত্মক (Positive) এবং ঋণাত্মক (Negative)। প্রতিটি আধানের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এর প্রভাব বিদ্যুৎ পরিবাহিতায় (Conductivity) এবং রোধ (Resistance) নির্ধারণ করে। এই লেখায় আমরা ওহমের সূত্র (Ohm's Law) এর মাধ্যমে রোধ ও তড়িৎ পরিবাহিতা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করব।
আধান বা চার্জ এবং ওহমের সূত্র
আধান
মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মকে আধান বলে।
আধানের বৈশিষ্ট্য
- পরিবাহিতে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করে।
- তড়িৎ ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।
- চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।
- পদার্থের মধ্যে আকর্ষন/বিকর্ষন তৈরি।
আধানের প্রকারভেদ
ধনাত্মকঋনাত্মক
ভর
- ইলেকট্রন ➡️ \(9.11 × 10^{-31} Kg\)
- প্রোটন ➡️ \(6.67 × 10^{-27} Kg \)
চার্জ
- ইলেকট্রন ➡️ \( - 1.6 × 10^{-19 C}\)
- প্রোটন ➡️ \(1.6 × 10^{-19} C\)
আধান প্রকৃতি
- আকর্ষন ➡️ বিপরীত ধর্মী আধানদ্বয়
- বিকর্ষন ➡️ সম ধর্মী অধানদ্বয়
আধানের একক
➡️ কুলম্ব (C)
পদার্থে মোট আধানের মান
- \(q=ne\)
- \(q\) = মোট আধান
- \(n\) = মোট \(e\) সংখ্যা
- \(e\) = একটি আধানের পরিমান
আধান প্রবাহের দিক
- ধনাত্মক আধান (P):- ব্যাটারির ধনাত্মক দিক থেকে ঋনাত্মক দিক
- ঋনাত্মক আধান (e):- ব্যাটারির ঋনাত্মক দিক থেকে ধনাত্মক দিকে।
তড়িৎপ্রবাহ
পরিবাহিতার ওপর ভিত্তি করে কঠিন পদার্থকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়-
- পরিবাহী (মুক্ত e থাকে)
- অপরিবাহী (মুক্ত e থাকে না)
- অর্ধপরিবাহী (মুক্ত e সামান্য থাকে)
তড়িৎ প্রবাহের শর্ত
- পরিবাহি হতে হবে।
- পরিবাহিতে মুক্ত থাকতে হবে।
- পরিবাহির ২ প্রান্তে বিভব পার্থক্য থাকতে হবে।
সংজ্ঞা:- কোনো পরিবাহির যেকোনো প্রস্থচ্ছেদে ক্ষেত্রফলের মধ্যে দিয়ে একক সময়ে
যে পরিমানে আধান প্রবাহিত হয়, তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে
\(I = \frac{Q}{t}\)
একক: \(CS^{-1}\)
অ্যাম্পিয়ার ( \(1A\) ) কাকে বলে?
প্রতি একক সময়ে কোনো পরিবাহকের মধ্যদিয়ে এক কুলম্ব আধান প্রবাহিত হলে তাকে এক
অ্যাম্পিয়ার ( 1A ) বলে
\(\therefore\) \(1A =1S \times 1C\)
তড়িৎ প্রবাহের প্রকারভেদ
আধানের স্থানান্তরের উপর ভিত্তি করে ২ প্রকার।
- স্থির তড়িৎ: স্থির আধানের ক্রিয়া
- চল তড়িৎ: গতিশীল আধানের ক্রিয়া
তড়িৎ প্রবাহের দিক
- প্রচলিত দিক
- প্রকৃত দিক
প্রচলিত
- ব্যাটারির + ve থেকে - ve দিকে।
- H.V থেকে LV দিকে।
- ধনাত্মক আধানের দিকে।
- ধনাত্মক আধানের বিপরীতে দিকে।
প্রকৃত
- ব্যাটারির (-) ve (+) ve দিকে।
- L.V থেকে H.V দিকে
- e--এর দিকে
- ধনাত্মক আধানের বিপরীতে
ওহমের সূত্র
স্থির তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহির মধ্য দিয়ে যে পরিমান তড়িৎ প্রবাহিত হয়, তা ঐ পরিবাহির দুই প্রান্তে বিভব পার্থক্যের অমানুপাতিক।
মনেকরি, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় \(AB\) পরিবাহীর \(A\) প্রান্তের বিভব \(V_{A}\)\(B\) প্রান্তের বিভব \(V_{B}\) । যদি \(V_{A} V_{B}\) হয়, তবে পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য \(V=V_{A} - V_{B}\)।
সুতরাং \(I \propto V_{A} - V_{B}\)
⇒ \( I =GV \)
এখানে, G একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক, যাকে তড়িৎ পরিবাহিতা বলে। G এর বিপরীত রাশি
\(G = \frac{1}{R}\) ; R অন্য একটি ধ্রুবক যাকে পরিবাহীর রোধ বলে।
\(\therefore\) \(I = \frac{1}{R} \times V\)
বা, \( V = IR \)
ইহাই ওহমের সূত্র।
তাৎপর্য:-
- পরিবাহির তাপমাত্রা স্থির থাকে।
- দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য যত বেশি, তড়িৎ তত বেশি হবে।
- পরিবাহির রোধ যত কম, তড়িৎ প্রবাহ বেশি।
- \(I ও V\) পরস্পর এবং সমানুপাতিক।
- \(I ও R\) পরস্পর ব্যাস্তানুপাতিক।
তড়িৎ পরিবাহিতা
- কোনো পরিবাহির ২ প্রান্তের বিভব পার্থক্য এর তড়িৎ প্রবাহের অনুপাত।
- পরিবাহি রোধের বিপরীত রাশিকে তড়িৎ পরিবাহিতা বলে।
- একে \('G'\) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
উপসংহার
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, আধান এবং এর বৈশিষ্ট্য তড়িৎ প্রবাহের মৌলিক ভিত্তি গঠন করে। ওহমের সূত্রের মাধ্যমে আমরা রোধ, তড়িৎ পরিবাহিতা, এবং আধানের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার সুযোগ পাই। এটির বিভিন্ন প্রয়োগ যেমন, সার্কিট ডিজাইন এবং ইলেকট্রনিক্সের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আধান এবং তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন আমাদের বিদ্যুতের জগতকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দেয়।