রোধ ও আপেক্ষিক রোধ: তড়িৎসঞ্চালনের গুরুত্বপূর্ণ ধারণা

কিলোওয়াট-ঘণ্টা এবং তড়িৎ শক্তি: দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ

বৈদ্যুতিক পরিভাষা, সংজ্ঞা ও গাণিতিক সমীকরণ

১. রোধ (Resistance)

রোধ হলো একটি পদার্থের বৈশিষ্ট্য, যা তড়িৎপ্রবাহকে বাধা দেয়। রোধ নির্ভর করে বস্তুটির দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল এবং পদার্থের প্রকৃতির উপর।

\(R = ρ \frac{L}{A}\)

এখানে, \(R\) হলো রোধ, \(ρ\) হলো উপাদানের রোধত্ব (resistivity), \(L\) হলো তারের দৈর্ঘ্য, এবং \(A\) হলো তারের ক্ষেত্রফল।

২. তড়িৎপ্রবাহ (Electric Current)

তড়িৎপ্রবাহ হলো ইলেকট্রনের সরাসরি প্রবাহ। এটি সময়ের প্রতি একক তড়িৎ চার্জের প্রবাহ হিসাবে সংজ্ঞায়িত হয়।

\(I = \frac{Q}{t}\)

এখানে, I হলো তড়িৎপ্রবাহ, Q হলো চার্জ, এবং t হলো সময়।

৩. তড়িচ্চালক বল (Electromotive Force, EMF)

তড়িচ্চালক বল হলো একটি তড়িৎ উৎস থেকে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি।

\(EMF = V + Ir\)

এখানে, V হলো বিভব পার্থক্য, I হলো প্রবাহ, এবং r হলো অভ্যন্তরীণ রোধ।

৪. বিভব পার্থক্য (Potential Difference)

বিভব পার্থক্য হলো তড়িৎ প্রবাহকে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত করতে প্রয়োজনীয় তড়িৎ শক্তির পার্থক্য।

\(V = IR\)

এখানে, V হলো বিভব পার্থক্য, I হলো তড়িৎপ্রবাহ, এবং R হলো রোধ।

৫. উষ্ণতা গুণাঙ্ক (Temperature Coefficient of Resistance)

উষ্ণতা গুণাঙ্ক হলো উষ্ণতা পরিবর্তনের সাথে রোধের পরিবর্তনের হার। এটি একটি পদার্থের বৈশিষ্ট্য।

\(R_{t} = R_{0}[1 + α(T - T_{0})]\)

এখানে, \(R_{t}\) হলো তাপমাত্রা \(T\) তে রোধ, \(R_{0}\) হলো প্রাথমিক রোধ, এবং \(α\) হলো উষ্ণতা গুণাঙ্ক।

৬. কিলোওয়াট-ঘণ্টা (Kilowatt-hour)

কিলোওয়াট-ঘণ্টা হলো শক্তি পরিমাপের একটি একক, যা এক ঘণ্টায় এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।

Energy = Power × Time

এখানে, শক্তি Energy কিলোওয়াট-ঘণ্টায় মাপা হয়, ক্ষমতা Power কিলোওয়াটে এবং সময় Time ঘণ্টায়।

৭. তাপীয় ক্রিয়া (Thermal Effect)

তাপীয় ক্রিয়া হলো তড়িৎ প্রবাহের কারণে সৃষ্ট তাপ। জুলের সূত্র অনুযায়ী, তড়িৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় রোধের কারণে তাপ উৎপন্ন হয়।

H = I²Rt

এখানে, H হলো তাপ, I হলো তড়িৎপ্রবাহ, R হলো রোধ, এবং t হলো সময়।

৮. পটেনশিওমিটার (Potentiometer)

পটেনশিওমিটার একটি যন্ত্র যা বিভব পার্থক্য পরিমাপ করে। এটি দ্বিখণ্ডিত বর্তনীতে ব্যবহৃত হয়।

\(V_x = \frac{l_{x}}{l_{total}} × V_{total}\)

এখানে, \(V_{x}\) হলো মাপা বিভব, \(l_{x}\) হলো বিভাজিত অংশের দৈর্ঘ্য এবং \(V_{total}\) হলো মোট বিভব।

৯. আপেক্ষিক রোধ (Specific Resistance)

আপেক্ষিক রোধ হলো কোনো বস্তুতে বিদ্যুতের প্রতিবন্ধকতা বা রোধ। এটি বস্তুটির দৈর্ঘ্য ও ক্ষেত্রফলের উপর নির্ভর করে।

\(ρ = \frac{RA}{L}\)

এখানে, \(ρ\) হলো আপেক্ষিক রোধ, \(R\) হলো রোধ, \(A\) হলো ক্ষেত্রফল, এবং \(L\) হলো দৈর্ঘ্য।

১০. শান্ট (Shunt)

শান্ট হলো একটি রোধ যা বড় রোধের সমান্তরালে সংযুক্ত থাকে এবং এর মাধ্যমে বিদ্যুতের কিছু অংশ প্রবাহিত হয়।

\(I_{shunt} = \frac{R_{main}}{ R_{shunt}} × I_{total}\)

এখানে, \(I_{shunt}\) হলো শান্টে প্রবাহিত প্রবাহ, \(R_{main}\) হলো প্রধান রোধ, এবং \(R_{shunt}\) হলো শান্ট রোধ।

১১. পোস্ট অফিস বক্স (Post Office Box)

পোস্ট অফিস বক্স হলো একটি যন্ত্র যা রোধের মান নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি Wheatstone Bridge এর সাহায্যে রোধ নির্ণয় করে।

\(R_unknown = \frac{R_{1}}{R_{2}} × R_{known}\)

এখানে, \(R_{unknown}\) হলো অজানা রোধ, \(R_{1}\) এবং \(R_{2}\) হলো রোধের অনুপাত, এবং \(R_{known}\) হলো পরিচিত রোধ।

১২. প্রবাহ ঘনত্ব (Current Density)

প্রবাহ ঘনত্ব হলো একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের পরিমাণ।

\(J = \frac{I}{A}\)

এখানে, \(J\) হলো প্রবাহ ঘনত্ব, \(I\) হলো তড়িৎ প্রবাহ, এবং \(A\) হলো ক্ষেত্রফল।

১৩. তাড়ন বেগ (Drift Velocity)

তাড়ন বেগ হলো বাহিরের শক্তির প্রয়োগে তড়িৎ কণার গতির হার।

\(v_{d} = \frac{I}{nAe}\)

এখানে, \(v_{d}\) হলো তাড়ন বেগ, \(I\) হলো তড়িৎপ্রবাহ, \(n\) হলো মুক্ত ইলেকট্রনের ঘনত্ব, \(A\) হলো প্রস্থচ্ছেদ ক্ষেত্রফল, এবং \(e\) হলো ইলেকট্রনের চার্জ।

১৪. তাপীয় ক্রিয়া (Thermal Effect of Current)

তড়িৎ প্রবাহের কারণে সৃষ্ট তাপীয় প্রতিক্রিয়াকে তাপীয় ক্রিয়া বলা হয়, যা জুলের সূত্র অনুসারে ঘটে।

H = I²Rt

এখানে, H হলো তাপ উৎপন্ন হওয়া, I হলো তড়িৎপ্রবাহ, R হলো রোধ, এবং t হলো সময়।

১৫. যান্ত্রিক সমতা (Mechanical Equivalent of Heat)

তাপ এবং যান্ত্রিক কাজের মধ্যে সম্পর্ককে যান্ত্রিক সমতা বলা হয়। এটি পরিমাপ করে কতটা যান্ত্রিক কাজ তাপের সমতুল্য।

\(J = \frac{W}{H}\)

এখানে, \(J\) হলো যান্ত্রিক সমতা, \(W\) হলো যান্ত্রিক কাজ, এবং \(H\) হলো তাপ।

১৬. অভ্যন্তরীণ রোধ (Internal Resistance)

অভ্যন্তরীণ রোধ হলো একটি তড়িৎ উৎসের নিজস্ব রোধ, যা তড়িৎ প্রবাহকে বাধা দেয়।

V = E - Ir

এখানে, V হলো বিভব পার্থক্য, E হলো উৎসের তড়িচ্চালক বল (EMF), I হলো তড়িৎপ্রবাহ, এবং r হলো অভ্যন্তরীণ রোধ।

১৭. বিভব পার্থক্য (Potential Difference)

বিভব পার্থক্য হলো তড়িৎ প্রবাহকে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত করতে প্রয়োজনীয় তড়িৎ শক্তির পার্থক্য।

V = IR

এখানে, V হলো বিভব পার্থক্য, I হলো তড়িৎপ্রবাহ, এবং R হলো রোধ।

১৮. সুপ্ত ভোল্ট (Latent Voltage)

সুপ্ত ভোল্ট হলো এমন একটি বিভব যা বর্তমানে বর্তনীতে প্রবাহিত হয় না, তবে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সক্রিয় হতে পারে।

১৯. হারানো ভোল্ট (Lost Voltage)

হারানো ভোল্ট হলো উৎসের অভ্যন্তরীণ রোধের কারণে হারিয়ে যাওয়া শক্তি।

\(V_{lost} = Ir\)

এখানে, \(V_{lost}\) হলো হারানো ভোল্ট, \(I\) হলো তড়িৎপ্রবাহ, এবং \(r\) হলো অভ্যন্তরীণ রোধ।

২০. মিটার ব্রিজ (Meter Bridge)

মিটার ব্রিজ হলো একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র যা রোধ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত Wheatstone Bridge এর নীতি অনুসরণ করে কাজ করে, যেখানে দুটি প্রতিরোধকের অনুপাতের ভিত্তিতে একটি অজানা রোধ নির্ধারণ করা হয়।

\(R_{unknown} = \frac{l_{1}}{l_{2}} × R_{known}\)

এখানে, \(R_{unknown}\) হলো অজানা রোধ, \(l_{1}\) হলো মিটার ব্রিজের অজানা রোধের সাথে যুক্ত তারের দৈর্ঘ্য, \(l_{2}\) হলো মিটার ব্রিজের পরিচিত রোধের সাথে যুক্ত তারের দৈর্ঘ্য, এবং \(R_{known}\) হলো পরিচিত রোধ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন