স্থির বিদ্যুৎ: আধান, কুলম্বের সূত্র, তড়িৎ ক্ষেত্র ও ব্যবহার
স্থির বিদ্যুৎ সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ ধারণা: আধানের প্রকারভেদ, চার্জিত করার উপায়, কুলম্বের সূত্র, তড়িৎ ক্ষেত্র ও বিভব, ধারক ও ধারকত্ব, এবং বাস্তব জীবনে স্থির বিদ্যুতের ব্যবহার। পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
আধান বা চার্জ (Charge)
পদার্থের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো আধান (Charge)। এটি এমন একটি ভৌত রাশি যা পদার্থের মধ্যে তড়িত্ সম্পর্কিত ক্রিয়া — যেমন আকর্ষণ বা বিকর্ষণ — ঘটাতে সক্ষম করে।
সংজ্ঞা
যে ভৌত রাশির কারণে দুটি বস্তুর মধ্যে তড়িত্ আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল ক্রিয়া করে, তাকে তড়িত্ আধান (Electric charge) বলে।
আধানের প্রকারভেদ
- ধনাত্মক আধান (Positive charge)
- ঋণাত্মক আধান (Negative charge)
নিয়ম: একই প্রকার আধান একে অপরকে বিকর্ষণ করে; ভিন্ন প্রকার আধান একে অপরকে আকর্ষণ করে।
একক
আধানের S.I. একক হলো কুলম্ব (Coulomb), প্রতীক C
।
যদি কোনো পরিবাহকের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে I অ্যাম্পিয়ার প্রবাহ
t সেকেন্ড ধরে চলে, তাহলে প্রবাহিত মোট আধান হবে:
\[ Q = I t \]
যেখানে, \(Q\) হলো আধান (C), \(I\) হলো প্রবাহ (A), \(t\) হলো সময় (s)।
মৌলিক আধান (Elementary charge)
একটি প্রোটন বা ইলেকট্রনের আধানকে মৌলিক আধান বলা হয়:
\[ e = 1.602 \times 10^{-19}\ \text{C} \]
প্রোটনের আধান = \(+e\)। ইলেকট্রনের আধান = \(-e\)।
আধানের ধর্ম
- আধানের সংরক্ষণ নীতি — কোনো বন্ধ সিস্টেমে মোট আধান অপরিবর্তিত থাকে। \( Q_{\text{Total}}\) = ধ্রুব (constant)
- কোয়ান্টাইজেশন — একটি দেহের মোট আধান সবসময় মৌলিক আধানের পূর্ণসংখ্যাগুণ: \[ Q = n e,\quad n \in \{0, \pm1, \pm2, \dots\} \]
- আধান সৃষ্টি ও ধ্বংস করা যায় না; পরিবর্তে ইলেকট্রন স্থানান্তর করে আধান স্থানান্তর করা হয়।
আধান সৃষ্টির উপায়
- ঘর্ষণ (By friction)
- সংস্পর্শ (By conduction)
- তড়িত্ আবেশ/ইন্ডাকশন (By induction)
উদাহরণ
- রাবার বেলুন কাপড় দিয়ে ঘষলে ইলেকট্রন স্থানান্তর হয়ে বেলুন ঋণাত্মক ধারায়িত হতে পারে এবং ছোট কাগজ আকর্ষণ করে।
- কাচের দণ্ড রেশম দিয়ে ঘষলে কাচ ধনাত্মক আধানিত হয়।
- ইবোনাইট দণ্ড পশম দিয়ে ঘষলে ইবোনাইট ঋণাত্মক আধানিত হয়।
তড়িৎ আবেশ
তড়িৎ আবেশ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো চার্জিত বস্তু অচার্জিত বস্তুকে স্পর্শ না করে শুধুমাত্র তার উপস্থিতিতে সাময়িকভাবে চার্জিত করে।
তড়িৎ আবেশ (Electrostatic Induction) পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা চার্জের আচরণ ও বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র বোঝাতে সাহায্য করে। নিচে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
⚡ তড়িৎ আবেশ কীভাবে কাজ করে?
- আবেশী চার্জ: একটি চার্জিত বস্তু (যেমন ধনাত্মক বা ঋণাত্মক) যখন একটি অচার্জিত পরিবাহীর কাছে আনা হয়, তখন সেই পরিবাহীর মধ্যে চার্জের পুনর্বিন্যাস ঘটে।
- আবিষ্ট বস্তু: অচার্জিত বস্তুটি তখন সাময়িকভাবে চার্জিত হয়ে যায়, যদিও তাকে স্পর্শ করা হয়নি।
- আবেশ প্রক্রিয়া: এই প্রক্রিয়ায় চার্জিত বস্তুটি সরিয়ে নিলে অচার্জিত বস্তুটি আবার চার্জশূন্য হয়ে পড়ে।
🧲 উদাহরণ
- চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ানোর পর কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করা।
- বেলুন ঘষে দেওয়ালে লাগানো — এগুলো তড়িৎ আবেশের বাস্তব উদাহরণ।
🔍 তড়িৎ আবেশের প্রকারভেদ
- ধনাত্মক আবেশ: যখন ধনাত্মক চার্জিত বস্তু অচার্জিত বস্তুকে ধনাত্মক চার্জ প্রদান করে।
- ঋণাত্মক আবেশ: ঋণাত্মক চার্জিত বস্তু থেকে ঋণাত্মক চার্জ সঞ্চারিত হয়।
🧪 পরীক্ষামূলক প্রমাণ
- একটি ধাতব বলকে চার্জিত রডের কাছে আনলে, বলের এক পাশে বিপরীত চার্জ এবং অন্য পাশে একই চার্জ দেখা যায়।
- রড সরিয়ে নিলে বলটি আবার নিরপেক্ষ অবস্থায় ফিরে যায়।
📚 পাঠ্যবই ও শিক্ষামূলক উপকরণ
নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বইতে তড়িৎ আবেশ অধ্যায়ে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
🔋 কুলম্ব সূত্র
যখন দুটি স্থির চার্জ একে অপরের থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করে, তখন তারা একে অপরের উপর একটি বল প্রয়োগ করে। এই বলের মান কুলম্ব সূত্র দ্বারা নির্ধারিত হয়:
\[ F = k \cdot \frac{q_1 \cdot q_2}{r^2} \]
যেখানে:
- \( F \) = দুই চার্জের মধ্যে বল (নিউটন)
- \( q_1, q_2 \) = দুই চার্জের মান (কুলম্ব)
- \( r \) = চার্জদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব (মিটার)
- \( k = 9 \times 10^9 \, \text{Nm}^2\text{C}^{-2} \) = কুলম্ব ধ্রুবক
📘 উদাহরণ:
ধরা যাক, দুটি চার্জ যথাক্রমে \( q_1 = 20\, \text{C} \) এবং \( q_2 = 70\, \text{C} \), এবং তাদের মধ্যে দূরত্ব \( r = 0.5\, \text{m} \)। তাহলে তাদের মধ্যে বল কত হবে?
প্রদত্ত:
- \( q_1 = 20\, \text{C} \)
- \( q_2 = 70\, \text{C} \)
- \( r = 0.5\, \text{m} \)
- \( k = 9 \times 10^9 \, \text{Nm}^2\text{C}^{-2} \)
সমাধান:
\[ F = k \cdot \frac{q_1 \cdot q_2}{r^2} = (9 \times 10^9) \cdot \frac{20 \cdot 70}{(0.5)^2} = (9 \times 10^9) \cdot \frac{1400}{0.25} = (9 \times 10^9) \cdot 5600 = 5.04 \times 10^{13} \, \text{N} \]
উত্তর: \( F = 5.04 \times 10^{13} \, \text{N} \)
তড়িৎক্ষেত্র ও তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা
Electric Field and Intensity of Electric field
মনে কর, A একটি ধনাত্মক আধান দ্বারা আহিত বস্তু। এখন P বিন্দুতে এটি একটি আধান '\(\text{+q}\)' জমা হয় তাহলে A আহিত আধানটির ওপর বল প্রয়োগ করবে। আধানের প্রকৃতি অনুযায়ী এই বল আকর্ষণ বল বা বিকর্ষণ বলও হতে পারে। আধান '\(\text{+q}\)' এর ওপর A আহিত বস্তুটি যে বল প্রয়োগ করে তার দিক P বিন্দুতে আহিত আধানের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে। যদি P বিন্দুতে আহিত আধানটিও ধনাত্মক হয় তাহলে এটি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল অনুভব করবে। একটি আহিত বস্তুকে ঘিরে নিকটবর্তী অন্য একটি আহিত বস্তু রাখলে সেটি আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল অনুভব করে। আহিত বস্তুর চারদিকে যে অঞ্চল জুড়ে এই প্রভাব বিদ্যমান থাকে সেই অঞ্চলই ঐ আহিত বস্তুর তড়িৎক্ষেত্র।
একটি আহিত বস্তুর চারদিকে যে অঞ্চলব্যাপী তার প্রভাব বজায় থাকে অর্থাৎ, অন্য কোনো কোনো আহিত বস্তু বল অনুভব করে সেই স্থানই আহিত বস্তুটির তড়িৎক্ষেত্র বা ক্ষেত্র বা Electric field. এই তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে একটি একক ধনাত্মক চার্জ স্থাপন করলে সেটি যে বল অনুভব করে বা ঐ তড়িৎক্ষেত্রের যে প্রভাব সৃষ্টি হয় সেই বলের মানকে ঐ বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা বা তড়িৎ প্রাবল্য বলে।
ধরা যাক, P বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্রের প্রাবল্য নির্ণয় করতে হবে। P বিন্দুতে \(\text{+q}\) একক ধনাত্মক আধান স্থাপিত হয়। ফলে \(\text{+Q}\) আধানের জন্য \(\text{+q}\) আধানটি যে বল অনুভব করে, ঐ বলের দিক P বিন্দুতে \(\text{+Q}\) আধান হতে দূরত্ব বরাবর বহির্মুখী। P বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্রের দিক হলো ঐ বলের দিক এবং এই বলের মানকে P বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা বা প্রাবল্য বা Electric field intensity বলে। তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতাকে \(\text{E}\) দ্বারা সূচিত করা হয়। P বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতার একক নিউটন/কুলম্ব (\(\text{NC}^{-1}\))। তড়িৎ তীব্রতা একটি ভেক্টর রাশি এবং এর দিক হলো তড়িৎক্ষেত্রের স্থাপিত ধনাত্মক আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বলের দিকে। তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে তীব্রতার মান,
\[ \text{E} = \frac{\text{F}}{\text{q}} \]এই সমীকরণ থেকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত কোনো আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বলের মান,
\[ \text{F} = \text{qE} \]অর্থাৎ, তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে স্থাপিত কোনো আধানের ওপর ক্রিয়াশীল বল ঐ বিন্দুতে তড়িৎক্ষেত্রের তীব্রতা ও স্থাপিত আধানের গুণফলের সমান।
গাণিতিক উদাহরণঃ কোনো তড়িৎক্ষেত্রের \(\text{10}\) কুলম্বের একটি আহিত বস্তু স্থাপন করলে সেটি \(\text{10}\) নিউটন বল লাভ করে। ঐ তড়িৎক্ষেত্রে \(\text{15}\) কুলম্বের একটি আহিত বস্তু স্থাপন করলে কত বল লাভ করবে?
সমাধানঃ
আমরা জানি,
\[ \text{E} = \frac{\text{F}}{\text{q}} \]আবার,
\[ \text{E} = \frac{\text{F}_1}{\text{q}_1} = \frac{\text{F}_2}{\text{q}_2} \]সুতরাং,
\[ \frac{\text{F}_1}{\text{q}_1} = \frac{\text{F}_2}{\text{q}_2} \]বা,
\[ \frac{\text{10N}}{\text{10C}} = \frac{\text{F}_2}{\text{15C}} \]বা,
\[ \text{F}_2 = \frac{\text{10}}{\text{10}} \times \text{15N} = \text{15N} \]এখানে,
বল, \(\text{F}_1 = 10\text{N}\)
আধান, \(\text{q}_1 = 10\text{C}\)
আবার,
আধান, \(\text{q}_2 = 15\text{C}\)
বল, \(\text{F}_2 = ?\)
উত্তর: \(\text{15N}\)
(চিত্রটি স্কেচ করা হয়নি, তবে চিত্রের বর্ণনা অনুযায়ী একটি ধনাত্মক চার্জ \(\text{+Q}\) দেখানো হয়েছে যার থেকে কিছু দূরে P বিন্দুতে একটি টেস্ট চার্জ \(\text{+q}\) রাখা হয়েছে। \(\text{+Q}\) থেকে P এর দিকে একটি বলের দিক \(\text{F}\) নির্দেশ করা হয়েছে। নিচে চিত্র: ১১.৯ লেখা আছে।)
তড়িৎ বিভব (Electric Potential)
ধরা যাক, দুইটি ধনাত্মক আধানযুক্ত ধাতব গোলককে একটি পরিবাহী তার দ্বারা সংযুক্ত করা হলো [চিত্র দেখুন]। এতে নিচের যেকোনো একটি ঘটনা ঘটতে পারে:
- বাম গোলক থেকে কিছু আধান ডান গোলকে যেতে পারে।
- ডান গোলক থেকে কিছু আধান বাম গোলকে যেতে পারে।
- আধানের অবস্থায় কোনো পরিবর্তন নাও হতে পারে।
আধান কোন গোলক থেকে কোন গোলকে যাবে, তা গোলকদ্বয়ের আধানের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ওপর, যাকে তড়িৎ বিভব বলা হয়। যে গোলকের বিভব বেশি, সেখান থেকে কম বিভবের গোলকে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হয়। বিভব সমান না হওয়া পর্যন্ত এই প্রবাহ চলতে থাকে।
অতএব, বিভব হলো আহিত পরিবাহকের একটি তড়িৎ অবস্থা, যা নির্ধারণ করে— ঐ পরিবাহককে অন্য কোনো পরিবাহকের সাথে সংযুক্ত করলে তা আধান দেবে না নেবে।
দুইটি আহিত পরিবাহকের মধ্যে আধানের প্রবাহ শুধুমাত্র বিভবের পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে, আধানের পরিমাণের ওপর নয়। উদাহরণস্বরূপ, দুটি পরিবাহকই ধনাত্মকভাবে আহিত, এবং প্রথমটির আধানের পরিমাণ দ্বিতীয়টির চেয়ে বেশি, কিন্তু বিভব কম। এখন যদি দুইটিকে সংযুক্ত করা হয়, তবে দ্বিতীয় পরিবাহক থেকে প্রথম পরিবাহকে ধনাত্মক আধান প্রবাহিত হবে। আধানের পরিমাণ বেশি হলেও বিভব কম হওয়ায় প্রথমটি আধান গ্রহণ করবে। বিভব সমান হলে আধানের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
বিভবের পরিমাণ (Quantity of Potential)
কোনো আহিত বস্তুর তড়িৎক্ষেত্রের মধ্যে একটি আধানকে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করতে কিছু কাজ করতে হয়। যদি ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটি ধনাত্মক হয়, তবে একটি ধনাত্মক আধানকে তার দিকে আনতে বিকর্ষণ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। অর্থাৎ, অসীমে অবস্থিত একটি একক ধনাত্মক আধানকে যত কাছাকাছি আনা হবে, তত বেশি কাজ করতে হবে। ফলে, ধনাত্মকভাবে আহিত বস্তুর নিকটবর্তী বিন্দুর বিভব বেশি হবে।
অন্যদিকে, যদি ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানটি ঋণাত্মক হয়, তবে একক ধনাত্মক আধানকে তার দিকে আনতে আকর্ষণ বলের সাহায্যে কাজ সম্পন্ন হয়। অসীম থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয়, তা দ্বারা ঐ বিন্দুর বিভব নির্ধারিত হয়।
এখানে "অসীম" বলতে বোঝানো হয়েছে তড়িৎক্ষেত্রের বাইরের এমন একটি বিন্দু, যেখানে ক্ষেত্র সৃষ্টিকারী আধানের কোনো প্রভাব নেই। সাধারণভাবে, কোনো চার্জ থেকে অসীম দূরত্বে তড়িৎ বিভব শূন্য ধরা হয়। হিসাবের সুবিধার্থে পৃথিবীর বিভবকেও শূন্য ধরা হয়।
অতএব, অসীম বা শূন্য বিভবের কোনো বিন্দু থেকে একক ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে যে পরিমাণ কাজ সম্পন্ন হয়, তাকে ঐ বিন্দুর বিভব বলা হয়।
যদি শূন্য বিভবের কোনো বিন্দু থেকে একক ধনাত্মক আধানকে পরিবাহকের নিকটবর্তী কোনো বিন্দুতে আনতে সম্পন্ন কাজের পরিমাণ \( W \) হয়, তবে ঐ বিন্দুর বিভব \( V \) হবে: \[ V = W \]
বিভব একটি স্কেলার রাশি।
এস.আই. এককে বিভব পরিমাপ করা হয় ভোল্ট (Volt) এককে। যদি অসীম থেকে এক কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে তড়িৎক্ষেত্রের কোনো বিন্দুতে আনতে ১ জুল কাজ করতে হয়, তবে ঐ বিন্দুর বিভব হবে ১ ভোল্ট। \[ 1 \text{ Volt (V)} = 1 \text{ Joule (J)} \cdot 1 \text{ Coulomb}^{-1} (C^{-1}) \]
তাৎপর্য: যদি কোনো বিন্দুর বিভব ১০০০V হয়, তবে শূন্য বিভবের কোনো স্থান থেকে এক কুলম্ব ধনাত্মক আধানকে ঐ বিন্দুতে আনতে ১০০০ জুল কাজ করতে হবে।
বিভব পার্থক্য (Potential difference)
একটি আধানকে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে স্থানান্তর করলে যদি কিছু কার্য সম্পাদিত হয় তাহলে দুইটি বিন্দুর মধ্যে বিভব স্থির থাকে বলে ধরা হয়। কিন্তু যদি কিছু কার্য সম্পাদিত হয়, তাহলে দুইটি বিন্দুর মধ্যে বিভব স্থির আছে বলে মনে করা হয়। দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য আছে বলে ধরা হয়। একক ধনাত্মক আধানকে তুমি বা অসীম থেকে ঐ বিন্দুতে পর্যন্ত আনতে সম্পাদিত কার্যকে বিভব বলে। একটি ধনাত্মক আধানকে তুমি বা অসীম থেকে ঐ বিন্দুতে পর্যন্ত আনতে সম্পাদিত কার্যকে বিভব বলে।
A ও B পরিবাহকদ্বয়ের কোনো পরিবাহী তার দ্বারা সংযুক্ত করলে তাদের মধ্যে বিভব পার্থক্যের কারণে এদের মধ্যে আধানের প্রবাহ ঘটে (চিত্র দেখুন)।
ধরা যাক, A ও B পরিবাহকদ্বয়ের বিভব যথাক্রমে \(V_A\) এবং \(V_B\)। এক্ষেত্রে সাধারণতঃ \(V_A\) এর বিভব \(V_B\) এর চেয়ে বেশি হবে। একক ধনাত্মক আধান A পরিবাহক থেকে B পরিবাহকে আনতে সম্পাদিত কার্যের পরিমাণ হবে \(V_A – V_B\) এই দুই বিন্দুর মধ্যে বিভব পার্থক্য। সুতরাং একক ধনাত্মক আধানকে এক পরিবাহক থেকে অন্য পরিবাহকে আনতে যে পরিমাণ কার্য সম্পাদিত হয়, তাকেই তাদের মধ্যে বিভব পার্থক্য বলা হয়। বিভব পার্থক্য পরিমাপ করা হয় জুল/কুলম্ব বা ভোল্ট এককে। যেমন A ও B পরিবাহকের বিভব পার্থক্য $1000\text{V}$ –এর অর্থ হচ্ছে B পরিবাহক থেকে A পরিবাহকে $1\text{C}$ ধনাত্মক আধান আনতে $1000\text{J}$ কার্য সম্পাদন করতে হবে।
যদি আধান ধনাত্মক পরিবাহক A থেকে নিম্ন বিভব সম্পন্ন B পরিবাহকে পরিবাহিত হয়, তাহলে \(V_A\) উচ্চতর বিভব সম্পন্ন A পরিবাহক থেকে নিম্ন বিভব সম্পন্ন B পরিবাহকে পরিবাহিত হয়। তখন B পরিবাহকে A পরিবাহকের তুলনায় ইলেকট্রনের প্রবাহ ঘটে। A ও B এর বিভব সমান না হওয়া পর্যন্ত ইলেকট্রনের প্রবাহ অব্যাহত থাকে।
B পরিবাহক থেকে ইলেকট্রন চলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে ধনাত্মক আধান লাভ করা, আর বিভব \(V_B\) এর তুলনায় \(V_A\) বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে A পরিবাহক থেকে ইলেকট্রন চলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে ধনাত্মক আধান বৃদ্ধি পাওয়া। এভাবে আধানের স্থানান্তর ইলেকট্রনের গতির কারণে ঘটে, যতক্ষণ না বিভব পার্থক্য শূন্য হচ্ছে। ঐ পর্যন্ত বিভব স্থির থাকবে। A ও B এর বিভব সমান হলে অর্থাৎ A ও B এর বিভব পার্থক্য শূন্য হলে এদের মধ্যে ইলেকট্রনের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
এইবার তুমি কিছু জানো
উপরের আলোচনায় আমরা দেখেছি যে কোনো পরিবাহক ধনাত্মক আধান লাভ করলে তার বিভব বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরিবাহকটি যদি পোলার হয় তাহলে ধনাত্মক আধান বৃদ্ধির কারণে বিভবের উন্নতি হওয়াটা ততটা স্বাভাবিক হয় না। এই কারণে কোনো পরিবাহককে পোলার করে তার ধনাত্মক আধান বৃদ্ধি করলে তার বিভব ততটা স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হয় না। যেমন সমানের থেকে পৃথিবীর দিকে তুমি কিছু ঝুলিয়ে দিলে তা আকাশের দিকে উল্টোভাবে ঝুলে গেলে আকাশ থেকে পৃথিবীতে তুমি একটি সমান্তরাল পাতে ঝুলে গেলে তা আকাশের দিকে উল্টোভাবে ঝুলে গেলে আকাশে তুমি একটি আধানের প্রভাবক ধরলেও পৃথিবীর দিকে উল্টোভাবে ঝুলে গেলে আকাশের দিকে পৃথিবীর দিকে একটি আধানের প্রভাবক ধরলেও পৃথিবীর দিকে উল্টোভাবে ঝুলে গেলে। আমাদের পৃথিবীও যথেষ্ট বড় এবং অপরিমিত পরিবাহক। এটি একটি আধানের আধার। যেকোনো পরিমাণ আধান এর থেকে ইলেকট্রন চলে যায় এবং এর বিভবের কোনো পরিবর্তন হয় না।
তাই পৃথিবীর বিভব আমরা শূন্য ধরে থাকি।
উপসংহার
স্থির বিদ্যুৎ পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক শাখা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা প্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আধানের ধারণা থেকে শুরু করে তড়িৎ ক্ষেত্র ও বিভব, কুলম্বের সূত্রের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি আধানের মধ্যে কীভাবে বল কাজ করে। ঘর্ষণ ও আবেশের মাধ্যমে বস্তু চার্জিত হয়, এবং ধারক ও ধারকত্বের মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। ইলেকট্রোস্কোপ বা ক্যামেরার ফ্ল্যাশের মতো ব্যবহারিক উদাহরণ স্থির বিদ্যুতের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে। এই অধ্যায় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলে, যা ভবিষ্যতের তড়িৎ ও চৌম্বকত্ব অধ্যয়নে সহায়ক হবে।