স্থিতি ও গতি: সংজ্ঞা, উদাহরণ, গতির প্রকারভেদ ও সমীকরণ | সহজ ব্যাখ্যা ও সৃজনশীল প্রশ্ন ও সমাধান

ভূমিকা

আমাদের চারপাশে যা কিছু দেখি, তার সবকিছুই কোনো না কোনোভাবে গতিশীল। একটি চলমান গাড়ি, একটি সাইকেল, এমনকি যখন আমরা কথা বলি বা হাঁটি, আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো নড়াচড়া করে। যখন আমরা স্থির বসে থাকি বা ঘুমিয়ে থাকি, তখনও আমাদের হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হতে থাকে এবং দেহের রক্তপ্রবাহ চলতে থাকে। শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গসমূহ অনবরত কাজ করে চলে। এমনকি যে পৃথিবীর ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি, সেটিও অবিরাম ঘুরছে, তাই আমাদের পড়ার টেবিল বা গাছপালাও পৃথিবীর সঙ্গে গতিশীল। এই মহাবিশ্বে প্রকৃতপক্ষে কোনো বস্তুই সম্পূর্ণরূপে স্থির নয়; সবকিছুই গতিশীল। তা সত্ত্বেও, আমরা স্থিতি এবং গতির ধারণা নিয়ে আলোচনা করি, যা আপেক্ষিকতার ওপর নির্ভরশীল। এই নিবন্ধে আমরা স্থিতি ও গতি, গতির প্রকারভেদ, গতি-সম্পর্কিত বিভিন্ন রাশি এবং গতির সমীকরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

স্থিতি ও গতি (Rest and Motion)

চিত্রঃ স্থিতিশীল ও গতিশীল বস্তু

আপনার হাতের ঘড়িটির কাঁটাগুলো যদি সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে সরে যায়, তাহলে আমরা বলি ঘড়িটি চলছে। যদি সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে, তাহলে সেই বস্তুকে গতিশীল বলা হয় এবং বস্তুর এই অবস্থাকে গতি বলে। এর বিপরীতভাবে, যদি কোনো বস্তু সময়ের সঙ্গে তার অবস্থান পরিবর্তন না করে, তাহলে পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে বস্তুটি স্থির থাকে এবং বস্তুর এই অবস্থাকে স্থিতি বলে।
পৃথিবী, সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র সবই গতিশীল। আমরা যদিও পৃথিবীর পৃষ্ঠে বাড়িঘর বা গাছপালাকে স্থির দেখি, কিন্তু পৃথিবী তার নিজের অক্ষের ওপর এবং সূর্যের চারপাশে ঘুরছে। তাই প্রকৃতপক্ষে এই মহাবিশ্বে কোনো কিছুই পরম স্থির নয়। সকল স্থিতি এবং সকল গতিই আপেক্ষিক।

গতির প্রকারভেদ (Types of Motion)

বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের ধরন সব ক্ষেত্রে একরকম হয় না। বস্তু বা ব্যক্তি কখনো সরল পথে, কখনো আঁকাবাঁকা পথে, কখনো ঘূর্ণন পথে চলে। কখনো একই জায়গায় থেকে ঘুরতে বা দুলতে থাকে। এই বিভিন্ন ধরনের গতির ওপর ভিত্তি করে গতিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়:

সরল রৈখিক গতি (Linear Motion)

চিত্রঃ সরল রৈখিক গতি (Linear Motion)

যখন কোনো বস্তু সরলরেখা বরাবর চলে, তখন বস্তুর সেই গতিকে সরল রৈখিক গতি বলে। উদাহরণস্বরূপ, মসৃণ মেঝেতে গড়িয়ে যাওয়া মার্বেলের গতি বা ওপর থেকে ছেড়ে দেওয়া বস্তুর মাটিতে পড়ার গতি।

বক্র রৈখিক গতি (Curvilinear Motion): 

চিত্রঃ বক্র রৈখিক গতি (Curvilinear Motion)

যদি কোনো গতিশীল বস্তুর গতিপথ বাঁকা বা বক্ররেখা বরাবর হয়, তখন বস্তুটির গতিকে বক্র রৈখিক গতি বলে। আঁকাবাঁকা পথে হাঁটা, সাইকেল, রিকশা বা মোটর গাড়ির গতি বক্র রৈখিক গতির উদাহরণ।

ঘূর্ণন গতি (Rotational Motion)

চিত্রঃ ঘূর্ণন গতি (Rotational Motion)

যখন কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে, তখন বস্তুটির যে গতি হয় তাকে ঘূর্ণন গতি বলে। চলমান সাইকেল বা রিকশার চাকার গতি, বৈদ্যুতিক পাখার গতি, পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর আবর্তনের গতি বা লাটিমের গতি ঘূর্ণন গতির উদাহরণ।

পর্যায় গতি (Periodic Motion)

চিত্রঃ পর্যায় গতি (Periodic Motion)

যদি কোনো গতিশীল বস্তুর গতি এমন হয় যে, এটি তার গতিপথের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পর পর একই দিক থেকে অতিক্রম করে, তাহলে সেই গতিকে পর্যায় গতি বলে। বৈদ্যুতিক পাখার গতি, ঘড়ির কাঁটার গতি এবং গ্রামোফোন রেকর্ডের গতি এর উদাহরণ। ঘড়ির পেন্ডুলামের গতি, দোলকের দোলন গতি এবং ইঞ্জিনের পিস্টনের সামনের-পেছনের গতিও পর্যায় গতির অন্তর্ভুক্ত।

দোলন গতি (Oscillatory Motion)

চিত্রঃ দোলন গতি (Oscillatory Motion)

এটি পর্যায় গতির একটি বিশেষ প্রকার। যদি কোনো গতিশীল বস্তু গতির অর্ধেক সময় একদিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় বিপরীত দিকে যায় এবং নির্দিষ্ট সময় পর পর তার গতিপথের কোনো বিন্দুকে একই দিক দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে যে গতি হয় তাকে দোলন গতি বলে। ঘড়ির দোলকের গতি এবং দোলনার গতি দোলন গতির উদাহরণ। দোলন গতিকে স্পন্দন গতিও বলা হয়।

জটিল গতি (Complex Motion)

চিত্রঃ দোলন গতি (Oscillatory Motion)

যখন কোনো গতিশীল বস্তুতে একই সঙ্গে একাধিক ধরনের গতি বর্তমান থাকে, তখন তার গতিকে যৌগিক গতি বা জটিল গতি বলে। রাস্তায় চলমান সাইকেল বা রিকশার চাকার ঘূর্ণন গতির সঙ্গে সরল ও বক্র পথে রৈখিক গতিও থাকে, তাই এই চলন্ত চাকার গতি একটি যৌগিক বা জটিল গতির উদাহরণ।

গতি সংক্রান্ত বিভিন্ন রাশি (Motion Related Quantities)

পদার্থবিজ্ঞানে গতিকে বোঝার জন্য বিভিন্ন ভৌত রাশি ব্যবহার করা হয়। পরিমাপযোগ্য সবকিছুকেই রাশি বলা হয়। রাশিগুলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুসারে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. স্কেলার রাশি (Scalar Quantities): যে সকল ভৌত রাশি প্রকাশের জন্য শুধুমাত্র মান (সংখ্যা ও একক) ব্যবহার করা হয়, তাদের স্কেলার রাশি বলে। এদের কোনো দিক থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, বস্তুর ভর, দৈর্ঘ্য, কাজ, ক্ষমতা, শক্তি, ঘনত্ব এবং তাপমাত্রা।
  2. ভেক্টর রাশি (Vector Quantities): যে সকল ভৌত রাশি প্রকাশের জন্য মান (সংখ্যা ও একক) এবং দিক উভয়ই উল্লেখ করা হয়, তাদের ভেক্টর রাশি বলে। এদের দিক থাকে। উদাহরণস্বরূপ, বস্তুর সরণ, বেগ, ত্বরণ, বল এবং ওজন। ভেক্টর রাশিকে লেখার সময় তাদের সংকেতের ওপরে বা নিচে তীর চিহ্ন \(\vec{A}\) বা বার চিহ্ন \(\bar{A}\) ব্যবহার করা হয়, অথবা মোটা হরফ (Bold letter) দিয়েও প্রকাশ করা হয়।

দূরত্ব ও সরণ (Distance and Displacement)

দূরত্ব (Distance): দুটি বিন্দুর মধ্যবর্তী পথের মোট দৈর্ঘ্যকে দূরত্ব বলে। এটি একটি স্কেলার রাশি, যার শুধুমাত্র মান আছে, কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই। একটি বস্তু যে পথ ধরে চলে, সেই পথের মোট পরিমাণই হলো দূরত্ব।

সরণ (Displacement): একটি বস্তু তার আদি অবস্থান থেকে শেষ অবস্থান পর্যন্ত নির্দিষ্ট দিকে যে সর্বনিম্ন সরলরৈখিক দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে সরণ বলে। এটি একটি ভেক্টর রাশি, যার মান ও দিক উভয়ই আছে।

গাণিতিক ব্যাখ্যা:

যদি একটি বস্তু A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে যায়:

দূরত্ব হলো \(A\) থেকে \(B\) পর্যন্ত অতিক্রম করা মোট পথের দৈর্ঘ্য, যা বিভিন্ন পথ হতে পারে।

সরণ হলো \(A\) থেকে \(B\) পর্যন্ত সরাসরি সরলরৈখিক দূরত্ব এবং \(A\) থেকে \(B\)-এর দিকে নির্দিষ্ট।

উদাহরণ: আপনি যদি আপনার বাড়ি থেকে পূর্বে \(4\) কিমি যান এবং তারপর পশ্চিমে \(3\) কিমি ফিরে আসেন, তাহলে:

মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব = \(4\) কিমি + \(3\) কিমি = \(7\) কিমি।

আপনার সরণ = (\(4\) কিমি পূর্ব দিকে) - (\(3\) কিমি পশ্চিম দিকে) = \(1\) কিমি পূর্ব দিকে (আদি অবস্থান থেকে শেষ অবস্থানের সরাসরি দূরত্ব ও দিক)।

দূরত্ব ও সরণের আন্তর্জাতিক একক হলো মিটার \((m)\)

দ্রুতি ও বেগ (Speed and Velocity)

দ্রুতি (Speed): একক সময়ে কোনো বস্তু যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে দ্রুতি বলে। এটি সময়ের সঙ্গে দূরত্বের পরিবর্তনের হার নির্দেশ করে এবং এটি একটি স্কেলার রাশি, যার শুধুমাত্র মান আছে।

বেগ (Velocity): একক সময়ে কোনো নির্দিষ্ট দিকে বস্তুর সরণের হারকে বেগ বলে। এটি সময়ের সঙ্গে সরণের পরিবর্তন এবং এর দিক উভয়ই নির্দেশ করে। বেগ একটি ভেক্টর রাশি, যার মান ও দিক উভয়ই আছে।

গাণিতিক ব্যাখ্যা:

   আন্তর্জাতিক একক: মিটার প্রতি সেকেন্ড \((m/s)\)

দ্রুতি \((v_s):\)

    \(v_s = \frac{D}{t}\) =  অতিক্রান্ত দূরত্ব / সময়

   আন্তর্জাতিক একক: মিটার প্রতি সেকেন্ড (m/s)

বেগ \((\vec{v}):\)

   \( \vec{v} = \frac{\vec{S}}{t}\)

উদাহরণ:

যদি একটি গাড়ি \(20\) সেকেন্ডে \(100\) মিটার দূরত্ব অতিক্রম করে:
গাড়ির দ্রুতি = \(100\) মিটার / \(20\) সেকেন্ড = \(5\) মিটার/সেকেন্ড।
যদি গাড়িটি নির্দিষ্ট পূর্ব দিকে \(100\) মিটার সরণ ঘটায়, তাহলে তার বেগ হবে \(5\) মিটার/সেকেন্ড পূর্ব দিকে।

ত্বরণ ও মন্দন (Acceleration and Deceleration)

ত্বরণ (Acceleration): সময়ের সঙ্গে বস্তুর বেগের পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে। যদি বস্তুর বেগ বৃদ্ধি পায়, তাহলে ত্বরণ ধনাত্মক হয়। এটি একটি ভেক্টর রাশি।
মন্দন (Deceleration): সময়ের সঙ্গে বস্তুর বেগের হ্রাস পাওয়ার হারকে মন্দন বলে। মন্দনকে ঋণাত্মক ত্বরণও বলা হয়।

গাণিতিক ব্যাখ্যা:

ত্বরণ \( (\vec{a}): \)

   যদি কোনো বস্তুর আদিবেগ \(u\) হয় এবং \(t\) সময় পর এর শেষ বেগ \(v\) হয়, তাহলে ত্বরণ \((\vec{a})\) হবে:

   \( \vec{a} = \frac{\vec{v} - \vec{u}}{t}\)  = বেগের পরিবর্তন / সময়

   আন্তর্জাতিক একক: মিটার প্রতি সেকেন্ড স্কয়ার \((\text{m/s}^2)\)

মন্দন: মন্দন হলো ঋণাত্মক ত্বরণ। যখন \(v < u\) হয়, তখন ত্বরণের মান ঋণাত্মক আসে, যা মন্দন নির্দেশ করে।

উদাহরণ:

একটি গাড়ি স্থির অবস্থা থেকে (আদিবেগ \(u = 0 \text{ m/s})\) যাত্রা শুরু করে \(5\) সেকেন্ড পর \(10 m/s\) বেগ অর্জন করে:

গাড়ির ত্বরণ = \(( \frac{10 m/s - 0 m/s)}{ 5}\) সেকেন্ড = \(2 \, \text{m/s}^2\)।

   যদি একটি গাড়ি \(20 m/s\) বেগে চলতে চলতে \(4\) সেকেন্ড পর \(8 m/s\) বেগে নেমে আসে:

গাড়ির ত্বরণ = \( \frac{(8 m/s - 20 m/s)}{4} \) সেকেন্ড = \( \frac{-12 m/s}{4} \) সেকেন্ড = \(-3 \, \text{m/s}^2\)। এখানে ত্বরণ ঋণাত্মক, অর্থাৎ মন্দন হলো \(3 \, \text{m/s}^2\)।

গতির সমীকরণসমূহ (Equations of Motion)

গতি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু মৌলিক সমীকরণ ব্যবহার করা হয়। এই সমীকরণগুলো মূলত আদিবেগ \((u),\) শেষ বেগ \((v),\) অতিক্রান্ত সময় \((t),\) সরণ \((S)\) এবং ত্বরণ \((a)\) এই পাঁচটি রাশি দ্বারা গঠিত। সুষম ত্বরণে নির্দিষ্ট দিকে গতিশীল বস্তুর জন্য এই সমীকরণগুলো নিম্নরূপে প্রমাণ করা যায়:

গতির সমীকরণসমূহের গাণিতিক প্রমাণ:

গতির সমীকরণগুলো পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণাগুলির মধ্যে অন্যতম, যা একটি বস্তুর গতিকে বর্ণনা করে। সুষম ত্বরণে গতিশীল বস্তুর জন্য এই সমীকরণগুলো প্রযোজ্য। নিচে এই সমীকরণগুলোর গাণিতিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো।

ধরা যাক, একটি বস্তু \('u'\) আদিবেগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে এবং \('a'\) সুষম ত্বরণে \('t'\) সময় ধরে চলে। এই সময়ে বস্তুটি \('s'\) দূরত্ব বা সরণ অতিক্রম করে এবং \('v'\) শেষ বেগ প্রাপ্ত হয়।

১. প্রথম সমীকরণ: \( v = u + at \) (বেগ-সময় সম্পর্ক)

ত্বরণের সংজ্ঞা অনুসারে, ত্বরণ হলো সময়ের সঙ্গে বেগের পরিবর্তনের হার।

অর্থাৎ, ত্বরণ (a) = (শেষ বেগ - আদি বেগ) /সময়

\(a = \frac{v - u}{t}\)

এখন, উভয় পক্ষকে \(t\) দ্বারা গুণ করে পাই:

\(at = v - u\)

u কে বাম পাশে নিয়ে এলে:

\(v = u + at\) (প্রমাণিত)

এই সমীকরণটি বস্তুর শেষ বেগ, আদি বেগ, ত্বরণ এবং সময়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

২. দ্বিতীয় সমীকরণ: \( s = ut + \frac{1}{2}at^2\) (সরণ-সময় সম্পর্ক)

আমরা জানি, সুষম ত্বরণে গতিশীল বস্তুর ক্ষেত্রে গড় বেগ = (আদি বেগ + শেষ বেগ ) / 2

গড় বেগ, \( \bar{v} = \frac{u + v}{2}\)

আবার, সরণ (s) = গড় বেগ \(\times\) সময় (t)

\( s = \left(\frac{u + v}{2}\right) \times t \)

প্রথম সমীকরণ থেকে আমরা জানি, \(v = u + at \)। এই v-এর মান ওপরের সমীকরণে বসিয়ে পাই:

\( s = \left(\frac{u + (u + at)}{2}\right) \times t \) 

\( s = \left(\frac{2u + at}{2}\right) \times t \)

\( s = \left(\frac{2u}{2} + \frac{at}{2}\right) \times t \)

\( s = \left(u + \frac{1}{2}at\right) \times t \)

এখন \( t\) দ্বারা গুণ করে পাই:

\( s = ut + \frac{1}{2}at^2 \) (প্রমাণিত)

এই সমীকরণটি সরণ, আদি বেগ, ত্বরণ এবং সময়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

৩. তৃতীয় সমীকরণ: \(v^2 = u^2 + 2as\) (বেগ-সরণ সম্পর্ক)

প্রথম সমীকরণ থেকে আমরা পাই, \(v = u + at\)।

এই সমীকরণ থেকে \(t\) এর মান বের করি:

\( v - u = at \)

\( t = \frac{v - u}{a} \)

দ্বিতীয় সমীকরণের সরলীকৃত রূপটি থেকে আমরা পাই:

\(s = \left(\frac{u + v}{2}\right) \times t\)

এখন \(t\) এর মান এই সমীকরণে বসিয়ে পাই:

\( s = \left(\frac{u + v}{2}\right) \times \left(\frac{v - u}{a}\right) \)

এটি \((A+B)(A-B) = A^2 - B^2\) এর সূত্র অনুযায়ী লেখা যায়:

\( s = \frac{v^2 - u^2}{2a} \)

উভয় পক্ষকে \( 2a\) দ্বারা গুণ করে পাই:

\( 2as = v^2 - u^2 \)

\( u^2 \) কে বাম পাশে নিয়ে এলে:

\( v^2 = u^2 + 2as\) (প্রমাণিত)

এই সমীকরণটি শেষ বেগ, আদি বেগ, ত্বরণ এবং সরণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে।

পতনশীল বস্তুর গতি (Motion of Falling Bodies):

মুক্তভাবে পতনশীল বস্তুর ক্ষেত্রে, বাতাসের বাধা বা অন্য কোনো প্রভাব ছাড়া শুধুমাত্র পৃথিবীর আকর্ষণ বলের প্রভাবে বস্তু নিচে পড়ে। এই বস্তুর আদি বেগ শূন্য হয় (u=0), এবং এর ওপর অভিকর্ষজ ত্বরণ \('g'\) কাজ করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠের কাছাকাছি সকল বস্তুর ওপর এই ত্বরণের মান প্রায় সমান (প্রায় \(9.8 \text{ ms}^{-2}\) বা \(9.81 \text{ ms}^{-2})\)।

পতনশীল বস্তুর গতির জন্য গ্যালিলিও গ্যালিলি তিনটি সূত্র প্রদান করেন:

প্রথম সূত্র: স্থির অবস্থা এবং একই উচ্চতা থেকে বিনা বাধায় বা মুক্তভাবে পতনশীল সকল বস্তু সমান সময়ে সমান পথ অতিক্রম করে।

দ্বিতীয় সূত্র: স্থির অবস্থা থেকে বিনা বাধায় পতনশীল বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে প্রাপ্ত বেগ ঐ সময়ের সমানুপাতিক \((v \propto t)\)।

তৃতীয় সূত্র: স্থির অবস্থা থেকে বিনা বাধায় পতনশীল বস্তু নির্দিষ্ট সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তা ঐ সময়ের বর্গের সমানুপাতিক \((h \propto t^2)\)।

মুক্তভাবে পতনশীল বস্তুর গতির সমীকরণগুলো সাধারণ গতির সমীকরণ থেকে \(u=0, a=g\) এবং \(s=h\) বসিয়ে পাওয়া যায়:

\( v = gt \)

\( h = \frac{1}{2}gt^2 \)

\( v^2 = 2gh \)

সৃজনশীল প্রশ্ন ও সমাধান

নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :
\(15 \, kg\) ভরের একটি বস্তু \(2.5 \,m/s\) বেগে চলছিল। এর ওপর \(300 \, N\) এর একটি বল প্রয়োগ করা হয়। t সময় শেষে বস্তুর গতি হয় \(60  \, m/s\) এ।

ক। পর্যবৃত্ত গতি কাকে বলে?
খ। বেগ কোন ধরনের রাশি তা ব্যাখ্যা কর।
গ। \(t\) এর মান নির্ণয় কর।
ঘ। \(300 \, N\) এর পরিবর্তে কোনো বল প্রয়োগ না করলে বস্তুর গতি পরিবর্তনে ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:

ক।
পর্যবৃত্ত গতি একটি উপায়ক্রমিক গতি – যখন কোনো বস্তু বারবার একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর একই পথে একই অবস্থায় ফিরে আসে, তখন বস্তুটি পর্যবৃত্ত গতিতে চলেছে।

খ।
বেগ একটি ভেক্টর রাশি –
কারণ, এটি কোন বস্তুর অবস্থান সময়ের সাথে কত দ্রুত এবং কোন দিকে পরিবর্তিত হচ্ছে তা নির্দেশ করে। অর্থাৎ বেগ নির্ণয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিক প্রয়োজন হয়। সূর্যের দিকে যাওয়া একটি রকেট বা গতি নির্দেশ।

গ।
ধরা যাক,
বস্তুর ভর, \(m = 15 \, kg\) 
আদিবেগ, \(u = 2·5 \, m/s\) 
প্রয়োগকৃত বল, \(F = 300 \, N\) 
শেষবেগ, \(v = 60 \, m/s\) 
সময়, \(t = ?\) 

আমরা জানি,
\(F = ma\) 

অথবা, \(F = m\frac{v - u}{t}\) 
⇒ \(t = \frac{m(v - u)}{F}\) 

⇒ \(t = \frac{15 kg × (60 \, m/s \, –  \, 2·5 \, m/s)}{300 \, N}\) 
= \(\frac{15 × 57·5}{300}\) 
= \(\frac{862·5 \, Ns}{300 \, N}\) 
= \(2·875 \, s\) 

উত্তর: \(t\) এর মান \(= 2·875 \, s\) 

ঘ।
\(300 \, N\) এর পরিবর্তে কোনো বল প্রয়োগ না করলে বস্তুর গতিতে কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। নিচে এটি ব্যাখ্যা করা হলো:
নিউটনের গতি বিষয়ক দ্বিতীয় সূত্র মতে আমরা জানি,
\(F = ma\) 
⇒ \(F = m\frac{v – u}{t}\) 
অথবা, \(Ft = m(v – u)\) 

উপলব্ধ তথ্য অনুযায়ী,
বস্তুর আদিবেগ, \(u = 2·5 \, m/s\) 
যদি \(300 \, N\) বল প্রয়োগ না করা হয় তবে \(F = 0\) হবে।

⇒ \(0 × t = m(v – u)\) 
⇒ \(0 = m(v – u)\) 
⇒ \(v – u = 0\) 
⇒ \(v = u\) 
⇒ \(v = 2·5 \, m/s\) 

সুতরাং \(300 \, N\) বল প্রয়োগ না হলে বস্তুর কোনো পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ বস্তুটির গতি যেমন \(2.5 \, m/s\) ছিল শেষেও \(2.5 \, m/s\) থাকবে। বল প্রয়োগ না করলে বস্তুর গতি অপরিবর্তিত থাকবে।

অতএব, উপরের ব্যাখ্যা হতে বোঝা যায়, কোনো বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করলে বস্তুটি পূর্বে যে গতিতে ছিল তা স্থিতই থাকবে।

উপসংহার

গতি একটি মৌলিক ভৌত ধারণা যা আমাদের চারপাশে সবকিছুতেই বিদ্যমান। স্থিতি ও গতির আপেক্ষিকতা, গতির বিভিন্ন প্রকারভেদ এবং গতি-সম্পর্কিত রাশি যেমন দূরত্ব, সরণ, দ্রুতি, বেগ, ত্বরণ ও মন্দন পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গতির এই ধারণাগুলো এবং এদের গাণিতিক সমীকরণগুলো ব্যবহার করে আমরা বস্তুর গতিশীল অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করতে পারি এবং বিভিন্ন বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে পারি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন