ভূমিকা: বায়োট-স্যাভার্ট সূত্র চৌম্বকক্ষেত্রের উৎপত্তি ও তার প্রভাব বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইলেকট্রনের চার্জ, প্যারাচৌম্বক ও ডায়াচৌম্বক পদার্থের প্রকৃতি এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রয়োগ বিশ্লেষণে সাহায্য করে। এই সূত্রের মাধ্যমে আমরা বৃত্তাকার তারের কুন্ডলীর কেন্দ্রে চৌম্বকক্ষেত্রের হিসাব করতে পারি, যা পদার্থবিদ্যার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা তৈরি করতে সাহায্য করে।
তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া ও চৌম্বকত্ব
অধ্যায়-৪ থেকে বায়োট-স্যাভার্ট সূত্র নিয়ে আগের পোস্টে আমরা বিশদ আলোচনা করেছি। বায়োট-স্যাভার্ট সূত্রের প্রয়োগ সঠিকভাবে বুঝতে হলে এই সূত্রের মূল ধারণাগুলি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের পাঠের সুবিধার্থে, আগের পোস্টটি একবার দেখে নেয়ার জন্য নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
বায়োট-স্যাভার্ট সূত্র সম্পর্কিত পোস্টটি পড়ুনসৃজনশীল প্রশ্ন
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবেঃ
একটি সোজা তারের মধ্যেদিয়ে \(20 A\) তড়িৎ প্রবাহিত হচ্ছে। তারটির দৈর্ঘ্য \(5 m\) এবং শূন্যস্থানের চৌম্বক প্রবেশ্যতা \( 4\pi \times 10^{-7} TmA^{-1}\) ।
ক. ইলেকট্রনের চার্জ কত ?
খ. প্যারাচৌম্বক ও ডায়াচৌম্বক পদার্থের দুটি পার্থক্য লেখ।
গ. তার থেকে \(OS = 2m \) দূরত্বের \(S\) বিন্দুতে চৌম্বকক্ষেত্রের মান নির্ণয় করো।
ঘ. তারটিকে পেঁচিয়ে বৃত্তাকার করা হলে এর কেন্দ্রে কোনো চৌম্বকক্ষেত্র আবিষ্ট হবে কি ? গাণিতিকভাবে বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ (ক) :
ইলেকট্রনের চার্জ
ইলেকট্রনের চার্জ \( 1.6 \times 10^{-19} C \)
উত্তরঃ (খ) :
প্যারাচৌম্বক ও ডায়াচৌম্বক পদার্থের পার্থক্য
প্যারাচৌম্বক পদার্থ | ডায়াচৌম্বক পদার্থ |
---|---|
প্যারাচৌম্বক পদার্থ চৌম্বক দ্বারা আকর্ষিত হয়। | ডায়াচৌম্বক পদার্থ চৌম্বক দ্বারা বিকর্ষিত হয়। |
প্যারাচৌম্বক পদার্থের চৌম্বক প্রবেশ্যতা \( \mu \gt 1 \) । | ডায়াচৌম্বক পদার্থের চৌম্বক প্রবেশ্যতা \( \mu \lt 1 \) । |
উত্তরঃ (গ) :
সরল লম্বা পরিবাহী তারের নিকটে কোনো বিন্দুতে সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের মান
বায়োট-স্যাভার্ট সূত্রের প্রয়োগ
বায়োট-স্যাভার্ট সূত্র থেকে আমরা পাই,
\( B = \frac{\mu_{0}I}{2 \pi a} \)
এখানে, তড়িৎ প্রবাহ, \( I = 20 A \)
দূরত্ব, \( a = 2m \)
চেীম্বক প্রবেশ্যতা, \( \mu_{0} = 4 \pi \times 10^{-7}TmA^{-1} \)
চৌম্বকক্ষেত্র, \(B = ?\)
\( \therefore \) \( B = \frac{4 \pi \times 10^{-7}TmA^{-1} \times 20 A}{2\pi \times 2m}\)
বা, \( B = 2 \times 10^{-6}T \)
উত্তরঃ (ঘ) :
বৃত্তাকার পরিবাহী তারের কুন্ডলীর কেন্দ্রে সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রের মান
বায়োট-স্যাভার্ট সূত্রের প্রয়োগ
বায়োট-স্যাভার্ট সূত্র থেকে আমরা পাই,
\( B = \frac{\mu_{0}I}{2r} \)
এখানে, তড়িৎ প্রবাহ, \( I = 20 A \)
ব্যাসার্ধ, \( r = ? \)
চেীম্বক প্রবেশ্যতা, \( \mu_{0} = 4 \pi \times 10^{-7}TmA^{-1} \)
চৌম্বকক্ষেত্র, \(B = ?\)
উদ্দীপক অনুসারে, বৃত্তাকার কুন্ডলীর পরিধি = তারের দৈর্ঘ্য
\( \therefore \) \(2 \pi r = 5 m \)
বা, \( r = \frac{5m}{2\pi} = 0.8 m\)
\( \therefore \) \( B = \frac{4 \pi \times 10^{-7}TmA^{-1} \times 20 A}{2 \times 0.8 m}\)
বা, \( B = 1.57 \times 10^{-5}T \)
অর্থাৎ তারটিকে পেঁচিয়ে বৃত্তাকার করা হলে এর কেন্দ্রে \( 1.57 \times 10^{-5}T \) মানের চৌম্বকক্ষেত্র আবিষ্ট হবে
উপসংহার: বায়োট-স্যাভার্ট সূত্রের প্রয়োগ ও ব্যাখ্যা ইলেকট্রনের চার্জ থেকে শুরু করে বিভিন্ন চৌম্বক পদার্থের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করতে অত্যন্ত কার্যকর। প্যারাচৌম্বক ও ডায়াচৌম্বক পদার্থের মধ্যকার পার্থক্য বোঝা এবং বৃত্তাকার কুন্ডলীর চৌম্বকক্ষেত্র নির্ণয়ে এই সূত্রটির গুরুত্ব অপরিসীম। সূত্রটি পদার্থবিদ্যার জটিলতা সহজে বুঝতে সহায়ক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিভিন্ন বাস্তব প্রয়োগের দিক নির্দেশনা দেয়।