আলোর ব্যতিচার ( Interference of Light )

আলোর ব্যতিচার: প্রকারভেদ, তরঙ্গের উপরিপাতন এবং ইয়ং এর দ্বি-চিড় পরীক্ষার ভিত্তিতে উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডোরা সৃষ্টির শর্ত এবং উপরিপাতন নীতি অনুযায়ী গাণিতিক সমীকরণের প্রতিপাদন

আলোর ব্যতিচার: প্রকারভেদ, তরঙ্গের উপরিপাতন এবং ইয়ং এর দ্বি-চিড় পরীক্ষার ভিত্তিতে উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডোরা সৃষ্টির শর্ত এবং উপরিপাতন নীতি অনুযায়ী গাণিতিক সমীকরণের প্রতিপাদন

ধারণা (Concept)

বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস ইয়ং (Thomas Young) ১৮০১ সালে প্রথমবারের মতো আলোর ব্যতিচার সম্পর্কে আবিষ্কার করেন। আলোর ব্যতিচার বুঝতে হলে তরঙ্গের উপরিপাতন, চিড় এবং সুসঙ্গত উৎসের ধারণা পরিষ্কারভাবে জানা জরুরি।

(ক) তরঙ্গের উপরিপাতন (Superposition of Waves):

তরঙ্গের ব্যতিচার হলো একাধিক তরঙ্গের উপরিপাতনের ফল। আলোর তরঙ্গ, শব্দ তরঙ্গ সহ বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গের প্রবাহের কারণে মাধ্যমের কণাগুলোর অবস্থান পরিবর্তিত হয়। যখন একাধিক তরঙ্গ একই মাধ্যম দিয়ে সঞ্চালিত হয়, তখন মাধ্যমের কোনো নির্দিষ্ট কণার উপর বিভিন্ন তরঙ্গ দ্বারা সৃষ্ট পৃথক পৃথক সরণ একত্রিত হয়ে একটি লব্ধি সরণ তৈরি করে। এই লব্ধি সরণ হলো সেই কণার বিভিন্ন তরঙ্গের সরণগুলোর বীজগাণিতিক যোগফল, যা তরঙ্গের উপরিপাতন নামে পরিচিত।

উদাহরণ: ধরা যাক, দুটি তরঙ্গ কোনো মাধ্যমের একটি নির্দিষ্ট কণাকে একই সাথে অতিক্রম করছে। প্রথম তরঙ্গের কারণে কণার সরণ \(y_{1}\) এবং দ্বিতীয় তরঙ্গের কারণে কণার সরণ \(y_{2}\)। তাহলে লব্ধি সরণ হবে, \(y = y_{1} ± y_{2}\)। যদি তরঙ্গ দুটি একই দশায় আপতিত হয়, তবে লব্ধি সরণ হবে, \(y = y_{1} + y_{2}\)। আর যদি তরঙ্গ দুটি বিপরীত দশায় আপতিত হয়, তবে লব্ধি সরণ হবে, \(y = y_{1} - y_{2}\)

আলোর ক্ষেত্রে "সরণ" বলতে তড়িৎ \(\vec E\) ও চৌম্বক ক্ষেত্রের তীব্রতা \(\vec B\) এর পরিবর্তনকেই বোঝানো হয়।

(খ) চিড় (Slit):

চিড় বলতে এমন একটি সরু ছিদ্রকে বোঝায়, যা দৈর্ঘ্যে অনেক বড় হলেও প্রস্থের দিক থেকে খুব ছোট। এর মাধ্যমে আলো বা অন্যান্য তরঙ্গ অতিক্রম করে।

(গ) সুসঙ্গত উৎস (Coherent Source):

যখন দুটি আলোক উৎস থেকে সমদশায় বা একটি নির্দিষ্ট দশা পার্থক্য বজায় রেখে একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক তরঙ্গ নির্গত হয় এবং এ দশা পার্থক্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে, তখন এই উৎসগুলোকে সুসঙ্গত উৎস বলা হয়।

প্রকৃতিতে কোনো আলোক উৎস পুরোপুরি সুসঙ্গত নয়, কারণ নির্দিষ্ট দশা পার্থক্য সর্বদা বজায় থাকে না। তবে ব্যতিচার পরীক্ষায়, একটি আলোক উৎস থেকে দুটি চিড়ের মধ্য দিয়ে আলোক প্রবাহিত করে দুটি সুসঙ্গত উৎস তৈরি করা সম্ভব।

একবর্ণী আলো (Monochromatic Light):

একবর্ণী আলো হলো এমন আলো, যার একটিমাত্র নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য রয়েছে।

আলোর ব্যতিচার (Interference of Light):

যখন দুটি সুসঙ্গত উৎস থেকে সমান কম্পাঙ্কের আলোক তরঙ্গ কোনো মাধ্যমের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে একসাথে এসে পৌঁছায়, তখন এদের উপরিপাতনের ফলে কখনও উজ্জ্বল এবং কখনও অন্ধকার অঞ্চলের সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাটিই আলোর ব্যতিচার নামে পরিচিত।

ব্যাখ্যা: যখন দুটি তরঙ্গ সমদশায় কোনো বিন্দুতে মিলিত হয়, অর্থাৎ উভয়ের তরঙ্গ শীর্ষ বা পাদ একসাথে ঐ বিন্দুতে আসে, তখন লব্ধি বিস্তার হয় দুই তরঙ্গের বিস্তারের যোগফলের সমান। যেহেতু প্রাবল্য বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক, তাই বিন্দুটি উজ্জ্বল দেখাবে।

অন্যদিকে, বিপরীত দশায় দুটি তরঙ্গ মিলিত হলে, অর্থাৎ একটির তরঙ্গ শীর্ষ এবং অন্যটির তরঙ্গ পাদ একসাথে একই বিন্দুতে পৌঁছালে, লব্ধি বিস্তার শূন্য হয় এবং প্রাবল্যও শূন্য হয়। ফলে বিন্দুটি অন্ধকার দেখা যায়। এটাই আলোর ব্যতিচার।

ব্যতিচারের প্রকারভেদ:

ব্যতিচারের দুটি ধরন রয়েছে:

(ক) গঠনমূলক ব্যতিচার (Constructive Interference):

যখন দুটি সুসঙ্গত উৎস থেকে নিঃসৃত সমান বা প্রায় সমান বিস্তারবিশিষ্ট আলোক তরঙ্গ একই দশায় কোনো বিন্দুতে মিলিত হয়ে আলোক প্রাবল্য বৃদ্ধি করে, তখন তাকে গঠনমূলক ব্যতিচার বলা হয়।

(খ) ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার (Destructive Interference):

যখন দুটি সুসঙ্গত উৎস থেকে নিঃসৃত সমান বা প্রায় সমান বিস্তারবিশিষ্ট আলোক তরঙ্গ বিপরীত দশায় কোনো বিন্দুতে মিলিত হয়ে আলোক প্রাবল্য কমিয়ে দেয় বা শূন্য করে, তখন তাকে ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার বলা হয়।

ব্যতিচার সজ্জা (Interference Pattern):

কোনো পর্দায় আলোর ব্যতিচার ঘটালে পর্দায় উজ্জ্বল ও অনুজ্জ্বল আলো বা আধারের একটি সজ্জা দেখা যায়। এই সজ্জাকে ব্যতিচার সজ্জা বলা হয়।

ব্যতিচার ডোরা (Interference Fringe):

কোনো তলের উপর আলোর ব্যতিচার ঘটানোর পর সেখানে পরস্পর সমান্তরাল উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডোরাগুলি দেখা যায়। এই ডোরাগুলিকেই ব্যতিচার ডোরা বলা হয়।

আলোর ব্যতিচারে সুসঙ্গত উৎস ব্যবহারের কারণ:

আলোর ব্যতিচার সৃষ্টির জন্য, আলোক তরঙ্গগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য একই হতে হয় এবং এগুলো সমদশায় বা নির্দিষ্ট দশা পার্থক্যে নির্গত হতে হয়। এ দশা পার্থক্য সবসময় অপরিবর্তিত থাকা আবশ্যক। এ কারণেই সুসঙ্গত আলোক উৎস ব্যবহার করা হয়।

স্থায়ী ব্যতিচারের শর্তসমূহ

স্থায়ী ব্যতিচার পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করা আবশ্যক। সেগুলো হলো:

  • ১. দুটি উৎস থাকতে হবে যা থেকে আলোক তরঙ্গ বের হবে।
  • ২. উভয় উৎস ক্ষুদ্র এবং সূক্ষ্মা হতে হবে, যাতে সঠিক আলোক প্রকৃতির ব্যতিচার ঘটাতে পারে।
  • ৩. উৎস দুটি একে অপরের কাছাকাছি অবস্থিত হতে হবে।
  • ৪. আলো প্রদানকারী উৎসগুলো সুসঙ্গত হতে হবে, অর্থাৎ তারা একই দশায় বা একটি নির্দিষ্ট দশা পার্থক্যে আলো নিঃসৃত করবে।
  • ৫. ব্যতিচার ঘটাতে যে তরঙ্গগুলো ব্যবহৃত হবে, সেগুলোর বিস্তার সমান বা প্রায় সমান হতে হবে।
  • ৬. আলোক তরঙ্গগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্ক সমান হতে হবে।
  • ৭. একাধিক উজ্জ্বল এবং অন্ধকার বিন্দুর সৃষ্টি করতে হলে আলোক উৎসগুলি একরঙ্গা হতে হবে।
  • ৮. তরঙ্গগুলোর মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ও স্থির দশাপার্থক্য থাকতে হবে।
  • ৯. পর্যায়ক্রমিক উজ্জ্বল ও অন্ধকার বিন্দু তৈরি করতে হলে, পথ পার্থক্য বা দশা পার্থক্য অর্ধ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের যুগ্ম বা অযুগ গুণিতক হতে হবে।

এই শর্তগুলো পূরণ হলে, স্থায়ী ব্যতিচার দেখা যাবে।

ব্যতিচারের বৈশিষ্ট্য:

  • ১. দুইটি সুসঙ্গত আলোক উৎস থেকে নির্গত তরঙ্গ একসাথে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হলে ব্যতিচার ঘটে।
  • ২. ব্যতিচার সজ্জায় তৈরি হওয়া পট্টিগুলোর প্রস্থ সাধারণত সমান হয়।
  • ৩. ব্যতিচারে অন্ধকার পট্টি সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে এবং তাতে কোনো আলো দেখা যায় না।
  • ৪. উজ্জ্বল পট্টিগুলোর আলোক তীব্রতা সব জায়গায় সমান থাকে।
  • ৫. উজ্জ্বল এবং অন্ধকার পট্টিগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব সমান থাকে।

ব্যতিচারের ব্যবহার:

  • ১. ব্যতিচার পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন তরল বা গ্যাসের প্রতিসরাঙ্ক নির্ণয় করা সম্ভব।
  • ২. কোনো পৃষ্ঠের মসৃণতা নির্ণয়ে ব্যতিচার পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  • ৩. আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য যথাযথভাবে নির্ণয়ের জন্য ব্যতিচার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
  • ৪. স্বচ্ছ পদার্থের পাতলা পর্দার পুরুত্ব \(10^{-5}\) সেন্টিমিটার পর্যন্ত নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায়।
  • ৫. ক্রিস্টালের দৈর্ঘ্য প্রসারণ সহগ নির্ধারণেও ব্যতিচার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
  • ৬. সূক্ষ্ম বর্ণালি রেখার বিশ্লেষণে ব্যতিচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আলোর ব্যতিচার সম্পর্কিত ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষা

আলোর ব্যতিচার (Interference) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানের ঘটনা, যা তরঙ্গ প্রকৃতির আলোর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষা (Young's Double-Slit Experiment) এই ব্যতিচার প্রক্রিয়ার একটি ক্লাসিক উদাহরণ।

পরীক্ষার পটভূমি

১৮০১ সালে টমাস ইয়ং প্রথম এই পরীক্ষাটি করেন। তিনি দেখান যে, আলোর তরঙ্গ প্রকৃতি রয়েছে এবং এটি ব্যতিচার ঘটাতে সক্ষম। ইয়ং-এর পরীক্ষাটি আলোর তরঙ্গ তত্ত্বকে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

পরীক্ষার বিবরণ

ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষায় একটি একক আলোক উৎস থেকে নির্গত আলো দুটি সংকীর্ণ চিড়ের (slit) মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই দুটি চিড়ের মাধ্যমে আলো দুটি পৃথক তরঙ্গ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে এবং পর্দায় গিয়ে একে অপরের সাথে উপরিপাতিত হয়। এই উপরিপাতনের ফলে পর্দায় উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডোরা (fringes) দেখা যায়, যা ব্যতিচারের ফলাফল।

ব্যাখ্যা

যখন দুটি তরঙ্গ একই দশায় (phase) মিলিত হয়, তখন গঠনমূলক ব্যতিচার (constructive interference) ঘটে এবং উজ্জ্বল ডোরা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, যখন দুটি তরঙ্গ বিপরীত দশায় (out of phase) মিলিত হয়, তখন ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার (destructive interference) ঘটে এবং অন্ধকার ডোরা সৃষ্টি হয়।

গঠনমূলক ব্যতিচারের শর্ত:

\(\delta = n\lambda\)

ধ্বংসাত্মক ব্যতিচারের শর্ত:

\(\delta = (n - \frac{1}{2})\lambda\)

এখানে, \(\delta\) হল পথ পার্থক্য (path difference), \(\lambda\) হল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য (wavelength), এবং \(n\) হল পূর্ণসংখ্যা (integer)।

পরীক্ষার গুরুত্ব

ইয়ং-এর দ্বি-চিড় পরীক্ষা আলোর তরঙ্গ প্রকৃতির একটি শক্তিশালী প্রমাণ। এটি দেখায় যে, আলো কণা নয় বরং তরঙ্গ হিসেবে আচরণ করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে আলোর ব্যতিচার এবং তরঙ্গ তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপিত হয়, যা পরবর্তীতে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আলোর ব্যতিচারের গাণিতিক বিশ্লেষণ

ধরা যাক, \(S\) একটি একবর্ণী আলোক উৎস। এই উৎস থেকে উদ্ভূত \(S_{1}\) ও \(S_{2}\) দুটি সুসঙ্গত উৎস। উৎসদ্বয় হতে আলোক তরঙ্গ উৎপন্ন হয়ে বিভিন্ন দিকে গমন করে। হিসাবের সুবিধার্থে \(XY\) পর্দার \(P\) বিন্দু অভিমুখী দুটি তরঙ্গ বিবেচনা করা হলো। শুরুতে তরঙ্গ দুটি একই দশায় থাকে।

ধরা যাক, তরঙ্গ দুটির তরঙ্গ দৈর্ঘ্য = \( \lambda \) বিস্তার= \( a \) তরঙ্গ বেগ = \(v\) রেখাছিদ্র দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব = \(d\) রেখাছিদ্র হতে পর্দার দূরত্ব = \(D\)

এখন তরঙ্গ দুটির পথ পার্থক্য = \(S_{2}P - S_{1}P\)

\(S_{1}\) হতে \(S_{2} P\) এর উপর \(S_{1} N\) লম্ব টানি \(S_{1}S_{2} = d\) ক্ষুদ্র এবং \(d\) এর তুলনায় \(OP\) (\(S_{1}\) ও \(S_{2}\) এর শীর্ষবিন্দু \(O\)) অনেক বড় বলে \(S_{1} P\) কে \(PN\) এর সমান বিবেচনা করা যায়।

\(S_{2}P - S_{1} P\) = \(S_{2} P - PN= S_{2} N = \delta \)

ধরা যাক, \(S_{1}P = x\) এবং \(S_{2}P = x + \delta \)

আরোও ধরা যাক, \(t\) সময় পরে \(S_{1}\) হতে আগত তরঙ্গের দরুণ \(P\) বিন্দুর সরণ, \(y_{1} = a \, sin \frac{2\pi}{\lambda} \, (vt - x)\)

এবং \(S_{2}\) হতে আগত তরঙ্গের দরুণ \(P\) বিন্দুর সরণ,

\( y_{2} = a \, sin \frac{2\pi}{\lambda} [vt - (x + \delta)] \)

তরঙ্গের উপরিপাতন নীতি অনুযায়ী, \(y = y_{1} + y_{2}\)

বা,\(y = a sin\frac{2\pi}{\lambda}(vt-x) \) \(+ a sin\frac{2\pi}{\lambda}[vt-(x + \delta)]\)

[ \( \because \, sin C+ sin D = 2 sin \, \frac{C+D}{2} cos \, \frac{C-D}{2} \)]

\( y = 2a \, sin \, \frac{2\pi}{\lambda} \left( \frac{vt-x+vt-x-\delta}{2} \right)\) \(\times cos \, \frac{2\pi}{\lambda} \left( \frac{vt-x-vt+x+\delta}{2} \right)\)

\( y = 2a \, sin \, \frac{2\pi}{\lambda} \left( vt-x - \frac{\delta}{2} \right) cos \, \frac{\pi}{\lambda} . \delta\)

\( y = A \, sin \, \frac{2\pi}{\lambda} \left( vt-x - \frac{\delta}{2} \right) cos \, \frac{\pi}{\lambda} . \delta\)

এখানে, \( A = 2a \, cos \frac{\pi\delta}{\lambda}\) ; যাকে লব্ধি তরঙ্গের বিস্তার বলে।

যেখানে:

আমরা জানি, তরঙ্গের তীব্রতা তার বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক, অর্থাৎ \(I = A^ {2}\)। সুতরাং, \(A\) এর মান ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যা-ই হোক না কেন, \(I\) সর্বদাই ধনাত্মক হবে।

A এর মান যত বেশি হবে, তত বেশি তীব্রতা বা উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুর উজ্জ্বলতা নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর:

  1. পথের পার্থক্য;
  2. দশার পার্থক্য এবং
  3. পর্দার আলোচ্য বিন্দুর অবস্থান।

উজ্জজ্বল বা গঠনমূলক ব্যতিচার সৃষ্টির শর্ত

যখন \( A = \pm2a\) হয় তখন গঠনমূলক বা উজ্জ্বল ডোরা সৃষ্টি হবে।

\(A\) এর মান বসিয়ে পাই,

\(2a \, cos\frac{\pi\delta}{\lambda} = \pm 2a\)

বা, \(cos\frac{\pi\delta}{\lambda} = \pm 1\)

বা, \( cos \, \frac{\pi\delta}{\lambda}\) = \(cos0, cos\pi, cos2\pi, cos 3\pi, . . . . . . .\)

বা, \(\frac{\pi\delta}{\lambda} = 0, \, \pi, \, \, 2\pi, \, 3\pi . . . . . \)

বা, \(\delta = 0, \, \frac{2\lambda}{2}, \, \frac{4\lambda}{2}, \, \frac{6\lambda}{2} . . . . . \)

অর্থাৎ পথ পার্থক্য \(0\) বা \(\frac{\lambda}{2}\) এর জোড় গুণিতক হলে উজ্জ্বল বা গঠনমূলক ব্যতিচার সৃষ্টি হবে।

\(\therefore \delta = 2n . \frac{\lambda}{2} = n\lambda\) [n = 0, 1, 2, 3, . . . . . ]

বা, \(d \, sin \, \theta = n\lambda\). [\( \because \, S_{2}N = d \, sin\, \theta = \delta\)]

ধ্বংসাত্মক বা অন্ধকার ডোরা সৃষ্টির শর্ত

যখন \( A = 0 \) হয় তখন ধ্বংসাত্মক বা অন্ধকার ডোরা সৃষ্টি হবে।

\(A\) এর মান বসিয়ে পাই,

\(2a \, cos\frac{\pi\delta}{\lambda} = 0 \)

বা, \(cos\frac{\pi\delta}{\lambda} = 0 \)

বা, \( cos \frac{\pi \delta}{\lambda}\) = \(cos \, \frac{\pi}{\lambda}, cos \, \frac{3\pi}{\lambda}, cos \, \frac{5\pi}{\lambda}, . . . . . . .\)

বা, \( \frac{\pi \delta}{\lambda}\) = \( \frac{\pi}{\lambda}, \frac{3\pi}{\lambda}, \frac{5\pi}{\lambda}, . . . . . . .\)

বা, \(\delta = 1, \, \frac{3\lambda}{2}, \, \frac{5\lambda}{2}, \, \frac{7\lambda}{2} . . . . . \)

অর্থাৎ পথ পার্থক্য \(\frac{\lambda}{2}\) এর বিজোড় গুণিতক হলে অন্ধকার বা ধ্বংসাত্মক ব্যতিচার সৃষ্টি হবে।

\(\therefore \delta = (2n-1) . \frac{\lambda}{2} = n\lambda\) [n = 1, 2, 3, . . . . . ]

বা, \(d \, sin \, \theta = (2n-1)\lambda\). [\( \because \, S_{2}N = d \, sin\, \theta = \delta\)]

উপসংহার

আলোর ব্যতিচার এবং তরঙ্গের উপরিপাতন আমাদের প্রাকৃতিক জগতের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্যকে উন্মোচন করে। ইয়ং এর দ্বি-চিড় পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে, আলোর তরঙ্গ প্রকৃতি কীভাবে উজ্জ্বল ও অন্ধকার ডোরা সৃষ্টি করে, যা তরঙ্গের উপরিপাতনের ফল। উজ্জ্বল ডোরা তখনই সৃষ্টি হয় যখন তরঙ্গগুলো গঠনমূলক উপরিপাতন ঘটায়, আর অন্ধকার ডোরা তৈরি হয় বিনাশমূলক উপরিপাতনের ফলে। উপরিপাতন নীতি অনুযায়ী গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করা যায়, যা আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের অনেক জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। আলোর তরঙ্গধর্মিতা ও তার বিভিন্ন প্রভাবগুলো বুঝতে এই পরীক্ষা একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করে, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নত গবেষণার পথকে প্রসারিত করবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন