এই পোস্টে ভেক্টর ও স্কেলার রাশির সংজ্ঞা ও তাদের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এছাড়া, ভেক্টরের বৈশিষ্ট্য, ভেক্টরের প্রতীক, এবং ভেক্টরের উপস্থাপন পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন বিশেষ ভেক্টর যেমন বল, কৌণিক ভরবেগ, লম্ব একক ভেক্টর, শূন্য বা নাল ভেক্টর, অবস্থান ভেক্টর এবং সরণ ভেক্টরের বিস্তারিত বিবরণও এই অংশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সবশেষে, এই পাঠ্য ভেক্টরের মৌলিক ধারণা ও তার প্রয়োগ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট সারসংক্ষেপ প্রদান করে।
ভেক্টর গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা, যা ভৌত রাশিগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করতে সাহায্য করে। ভেক্টর সম্পর্কিত জ্ঞান ছাড়া বল, বেগ, ত্বরণ, কৌণিক ভরবেগ, টর্ক ইত্যাদির মতো ভৌত রাশিগুলো বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি বস্তুর গতি, বলের প্রভাব এবং মহাবিশ্বের মৌলিক নিয়মাবলি বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে ভেক্টর পরিচিতির মূল বিষয়গুলো আলোচনা করা হলো:
ভেক্টর রাশি ও স্কেলার রাশি (Vector and Scalar Quantity):
স্কেলার রাশি (Scalar Quantity): যেসব ভৌত রাশির শুধুমাত্র মান আছে কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই, তাদের স্কেলার রাশি বলা হয়। যেমন: ভর, দৈর্ঘ্য, সময়, তাপমাত্রা, ঘনত্ব, আয়তন, দ্রুতি, কাজ ইত্যাদি।
![]() |
চিত্রঃ ভেক্টর রাশির যোগ-বিয়োগ ও গুণন |
ভেক্টর রাশি (Vector Quantity): যেসব ভৌত রাশির মান ও দিক উভয়ই আছে এবং যারা ভেক্টর যোগের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে, তাদের ভেক্টর রাশি বলা হয়। যেমন: সরণ, বেগ, ত্বরণ, বল, ওজন, তড়িৎ প্রাবল্য, কৌণিক ভরবেগ, টর্ক ইত্যাদি।
ভেক্টরের প্রতীক ও প্রকাশ (Symbol and Representation of Vector):
প্রতীক (Symbol): একটি ভেক্টরকে সাধারণত একটি অক্ষরের উপরে তীর চিহ্ন (\(\vec{A}\)) অথবা মোটা হরফে (A) প্রকাশ করা হয়। ভেক্টরের মানকে \(|\vec{A}|\) বা শুধু A দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
জ্যামিতিক প্রকাশ (Geometric Representation): একটি ভেক্টরকে একটি সরলরেখার সাহায্যে প্রকাশ করা হয়, যার এক প্রান্তে তীর চিহ্ন থাকে। রেখার দৈর্ঘ্য ভেক্টরের মান এবং তীর চিহ্ন ভেক্টরের দিক নির্দেশ করে।
ভেক্টর রাশির ধর্ম (Properties of Vector):
- ভেক্টর যোগ বিনিময় সূত্র (Commutative law) মেনে চলে।
- ভেক্টর যোগ সংযোজন সূত্র (Associative law) মেনে চলে।
- একটি ভেক্টরকে একটি স্কেলার রাশি দিয়ে গুণ করা যায়।
- একটি ভেক্টরের সাথে একটি স্কেলার রাশি যোগ করা যায় না।
- দুটি ভেক্টরের গুণফল স্কেলার বা ভেক্টর হতে পারে।
- একটি ভেক্টরকে একটি স্কেলার রাশি দিয়ে ভাগ করা যায়।
- সাধারণত একটি ভেক্টরকে অন্য একটি ভেক্টর দিয়ে ভাগ করা যায় না।
বিশেষ ভেক্টরসমূহ (Special Vectors):
একক ভেক্টর (Unit Vector):
যে ভেক্টরের মান একক (১) এবং দিক একটি নির্দিষ্ট ভেক্টরের দিকের সমান, তাকে একক ভেক্টর বলে। এটি \( \hat{A} = \frac{\vec{A}}{A} \) সূত্র দ্বারা প্রকাশ করা হয়, যেখানে A হলো \(\vec{A} \) ভেক্টরের মান। কার্তেসীয় স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় x, y, z অক্ষ বরাবর একক ভেক্টরগুলি যথাক্রমে \(\hat{i}\), \(\hat{j}\), \(\hat{k}\) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
শূন্য বা নাল ভেক্টর (Null or Zero Vector):
যে ভেক্টরের মান শূন্য এবং দিক অনির্দিষ্ট, তাকে শূন্য বা নাল ভেক্টর বলে। যেমন: একটি ভেক্টর থেকে একই ভেক্টর বিয়োগ করলে শূন্য ভেক্টর পাওয়া যায় (\( \vec{A} - \vec{A} = \vec{0} \))।
অবস্থান ভেক্টর (Position Vector):
মূলবিন্দু (বা কোনো নির্দিষ্ট রেফারেন্স বিন্দু) থেকে কোনো বিন্দুর অবস্থান নির্দেশকারী ভেক্টরকে ঐ বিন্দুর অবস্থান ভেক্টর বলে। এটি কোনো কণার বা বস্তুর অবস্থান বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
সরণ ভেক্টর (Displacement Vector):
কোনো বস্তুর আদি অবস্থান থেকে শেষ অবস্থানের দিকে নির্দেশিত ভেক্টরকে সরণ ভেক্টর বলে। এটি বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন নির্দেশ করে।
এই ধারণাগুলো ভেক্টর গণিতের ভিত্তি এবং পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় এর প্রয়োগ অপরিহার্য।
গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে ভৌত রাশিগুলোকে তাদের বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
- ভেক্টর রাশি (Vector Quantity) এবং
- স্কেলার রাশি (Scalar Quantity)।
এই দুটি রাশির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো তাদের দিকনির্দেশক ক্ষমতা।
স্কেলার রাশি (Scalar Quantity)
সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: যেসব ভৌত রাশির শুধুমাত্র মান আছে কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই, তাদের স্কেলার রাশি বা অদিক রাশি বলা হয়। এই রাশিগুলোর সম্পূর্ণ বর্ণনা দেওয়ার জন্য শুধু এদের মান উল্লেখ করাই যথেষ্ট।
উদাহরণ: স্কেলার রাশির কিছু সাধারণ উদাহরণ হলো:
- ভর (Mass)
- দৈর্ঘ্য (Length)
- সময় (Time)
- তাপমাত্রা (Temperature)
- ঘনত্ব (Density)
- আয়তন (Volume)
- দ্রুতি (Speed)
- কাজ (Work)
ভেক্টর রাশি (Vector Quantity)
সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: যেসব ভৌত রাশির মান ও দিক উভয়ই আছে এবং যারা ভেক্টর যোগের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে, তাদের ভেক্টর রাশি বা দিক রাশি বলা হয়। এই রাশিগুলোর সম্পূর্ণ বর্ণনা দেওয়ার জন্য মান ও দিক উভয়ই অপরিহার্য।
প্রতীক ও প্রকাশ: একটি ভেক্টরকে সাধারণত একটি অক্ষরের উপরে তীর চিহ্ন (\(\vec{A}\)) অথবা মোটা হরফে (A) প্রকাশ করা হয়। ভেক্টরের মানকে \(|\vec{A}|\) বা শুধু A দ্বারা প্রকাশ করা হয়। জ্যামিতিকভাবে, একটি সরলরেখা দ্বারা ভেক্টরকে প্রকাশ করা হয়, যার দৈর্ঘ্য ভেক্টরের মান এবং তীর চিহ্ন ভেক্টরের দিক নির্দেশ করে।
উদাহরণ: ভেক্টর রাশির কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো:
- সরণ (Displacement)
- বেগ (Velocity)
- ত্বরণ (Acceleration) [conversation history]
- বল (Force)
- ওজন (Weight)
- তড়িৎ প্রাবল্য (Electric Field Intensity) [conversation history]
- কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum) [conversation history]
- টর্ক (Torque) [conversation history]
সংক্ষেপে, ভেক্টর ও স্কেলার রাশির মূল পার্থক্য হলো দিক। স্কেলারের শুধুমাত্র মান থাকে, কিন্তু ভেক্টরের মান ও দিক উভয়ই থাকে।
ভেক্টর রাশিগুলো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারণা ব্যাখ্যা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এরা কিছু মৌলিক নিয়ম বা ধর্ম অনুসরণ করে। এই ধর্মগুলো ভেক্টর রাশিকে স্কেলার রাশি থেকে পৃথক করে এবং তাদের গাণিতিক প্রক্রিয়ার ভিত্তি তৈরি করে।
ভেক্টর রাশির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
মান ও দিক (Magnitude and Direction):
ভেক্টর রাশির একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো এর মান ও দিক উভয়ই থাকে। একটি ভেক্টরকে সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করার জন্য এর মান (যেমন: দূরত্ব, গতি) এবং দিক (যেমন: উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম) উভয়ই উল্লেখ করা অপরিহার্য। এটি স্কেলার রাশির (যার শুধু মান আছে) থেকে ভেক্টর রাশিকে আলাদা করে।
যোগের সূত্রাবলী (Laws of Addition):
বিনিময় সূত্র (Commutative Law):
ভেক্টর যোগ বিনিময় সূত্র মেনে চলে। এর অর্থ হলো, দুটি ভেক্টরের যোগের ক্রম পরিবর্তন করলে ফলাফলের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন: \(\vec{A} + \vec{B} = \vec{B} + \vec{A}\)।
সংযোজন সূত্র (Associative Law):
ভেক্টর যোগ সংযোজন সূত্র মেনে চলে। এর অর্থ হলো, তিন বা ততোধিক ভেক্টর যোগ করার সময় কোন দুটি ভেক্টরকে প্রথমে যোগ করা হচ্ছে তা ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলে না। যেমন: \((\vec{A} + \vec{B}) + \vec{C} = \vec{A} + (\vec{B} + \vec{C})\)।
স্কেলার দিয়ে গুণ ও ভাগ (Multiplication and Division by Scalar):
একটি ভেক্টর রাশিকে স্কেলার দিয়ে গুণ বা ভাগ করা যায়। যখন একটি ভেক্টরকে একটি স্কেলার রাশি দিয়ে গুণ করা হয়, তখন ভেক্টরের মান পরিবর্তিত হয়, কিন্তু দিক একই থাকে (যদি স্কেলারটি ধনাত্মক হয়)।
ভেক্টর দিয়ে গুণ ও ভাগ (Multiplication and Division by Vector):
উৎস অনুযায়ী, দুটি স্কেলার রাশির গুণফল সর্বদা একটি স্কেলার রাশি হয়।
তবে, দুটি ভেক্টর রাশির গুণফল সর্বদা একটি ভেক্টর রাশি নয়। এর অর্থ হলো, দুটি ভেক্টরের গুণফল স্কেলার রাশিও হতে পারে (যেমন: ডট গুণফল) অথবা ভেক্টর রাশিও হতে পারে (যেমন: ক্রস গুণফল)। এটি আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনাতেও উল্লেখ করা হয়েছিল।
উৎস আরও উল্লেখ করে যে, ভেক্টর রাশিকে ভেক্টর দিয়ে গুণ বা ভাগ করা যায় না। যদিও পদার্থবিজ্ঞানে ভেক্টর গুণনের নির্দিষ্ট নিয়ম (যেমন: ডট গুণন এবং ক্রস গুণন) প্রচলিত আছে, তবে সরাসরি "ভাগ" করার ধারণাটি প্রচলিত নয়। উৎসের এই বিবৃতিটি সরাসরি এর ভাষ্য অনুযায়ী দেওয়া হলো।
"ভেক্টর উপস্থাপন" (Vector Representation) নিয়ে, উৎসগুলোতে প্রদত্ত তথ্য এবং আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনা অনুযায়ী একটি বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:
ভেক্টর রাশিকে সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যাতে এর মান (magnitude) এবং দিক (direction) উভয়ই পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। মূলত দুটি প্রধান উপায়ে ভেক্টরকে উপস্থাপন করা হয়:
১. প্রতীকী উপস্থাপন (Symbolic Representation)
ভেক্টরকে অক্ষর ব্যবহার করে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করা হয়। এর কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি হলো:
অক্ষরের উপরে তীর চিহ্ন (Arrow above the letter):
এটি ভেক্টর উপস্থাপনের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। যেমন, একটি ভেক্টরকে \(\vec{A}\) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এখানে A একটি ভেক্টর রাশিকে নির্দেশ করে।
অক্ষরের উপরে মোটা হরফ (Bold letter):
অনেক সময় মোটা বা গাঢ় হরফ ব্যবহার করেও ভেক্টরকে বোঝানো হয়। যেমন, A একটি ভেক্টর রাশিকে নির্দেশ করে।
অক্ষরের নিচে দাগ (Underlined letter):
কিছু ক্ষেত্রে অক্ষরের নিচে দাগ দিয়েও ভেক্টরকে প্রকাশ করা হয়। যেমন, \(\underline{A}\) একটি ভেক্টর রাশিকে নির্দেশ করে।
ভেক্টরের মান প্রকাশ:
একটি ভেক্টরের মানকে সাধারণত ভেক্টর চিহ্নের চারপাশে দুটি খাড়া রেখা (মডুলাস চিহ্ন) দিয়ে প্রকাশ করা হয় অথবা শুধুমাত্র অক্ষরটি দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন, \(\vec{A}\) ভেক্টরের মানকে \(|\vec{A}|\) বা শুধু A দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
২. জ্যামিতিক উপস্থাপন (Geometric Representation)
ভেক্টর রাশিকে জ্যামিতিকভাবে একটি সরলরেখা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এই সরলরেখার দুটি অংশ ভেক্টরের মান ও দিক নির্দেশ করে:
সরলরেখার দৈর্ঘ্য (Length of the straight line): এই সরলরেখার দৈর্ঘ্য ভেক্টরের মান নির্দেশ করে। অর্থাৎ, ভেক্টরের মান যত বেশি হবে, রেখাটি তত লম্বা হবে।
তীর চিহ্ন (Arrowhead): সরলরেখার এক প্রান্তে থাকা তীর চিহ্নটি ভেক্টরের দিক নির্দেশ করে। তীরটি যেদিকে নির্দেশ করে, ভেক্টরটিও সেদিকে ক্রিয়াশীল হয়।
এই জ্যামিতিক উপস্থাপন ভেক্টরের মান এবং দিক উভয়কেই চাক্ষুষভাবে তুলে ধরে, যা পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং ভেক্টরের গতিপথ ও প্রভাব বোঝার জন্য অত্যন্ত সহায়ক। আমাদের পূর্ববর্তী আলোচনাতেও এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল যে একটি সরলরেখা দ্বারা ভেক্টরকে প্রকাশ করা হয়, যার দৈর্ঘ্য ভেক্টরের মান এবং তীর চিহ্ন ভেক্টরের দিক নির্দেশ করে।
বিশেষ ভেক্টর (Special Vectors)
পদার্থবিজ্ঞানে কিছু বিশেষ ধরণের ভেক্টর রয়েছে, যাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং নির্দিষ্ট ব্যবহার রয়েছে। উৎসগুলোতে উল্লিখিত প্রধান বিশেষ ভেক্টরগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১. একক ভেক্টর (Unit Vector)
সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: একক ভেক্টর হলো এমন একটি ভেক্টর যার মান এক (বা একক)। এর প্রধান কাজ হলো শুধুমাত্র দিক নির্দেশ করা। এটি কোনো ভেক্টরের দিক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
প্রকাশ: একক ভেক্টরকে সাধারণত অক্ষরের উপরে একটি হ্যাট (^) চিহ্ন দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন, \(\hat{A}\) একটি একক ভেক্টর।
উদাহরণ: কার্টেসিয়ান স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় X, Y, এবং Z অক্ষ বরাবর একক ভেক্টরগুলি যথাক্রমে \(\hat{i}\), \(\hat{j}\), এবং \(\hat{k}\) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
সূত্র: একটি ভেক্টর \(\vec{A}\) এর একক ভেক্টর \(\hat{A}\) নির্ণয় করা হয় ভেক্টরটিকে তার মান দিয়ে ভাগ করে। অর্থাৎ, \(\hat{A} = \vec{A} / |\vec{A}|\)। এখানে \(|\vec{A}|\) হলো \(\vec{A}\) ভেক্টরের মান।
২. শূন্য বা নাল ভেক্টর (Null or Zero Vector)
সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: শূন্য বা নাল ভেক্টর হলো এমন একটি ভেক্টর যার মান শূন্য।
দিক: এর কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই। এটিকে অনির্দিষ্ট বা যদৃচ্ছ দিকবিশিষ্ট ধরা হয়।
উদাহরণ: যদি একটি ভেক্টর থেকে একই ভেক্টরকে বিয়োগ করা হয়, তাহলে ফলাফল একটি শূন্য ভেক্টর হয়। যেমন, \(\vec{A} - \vec{A} = \vec{0}\)।
৩. অবস্থান ভেক্টর (Position Vector)
সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: অবস্থান ভেক্টর হলো এমন একটি ভেক্টর যা মূলবিন্দুর (origin) সাপেক্ষে কোনো বিন্দুর অবস্থান নির্দেশ করে। এটি কোনো কণার বা বস্তুর অবস্থান চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়।
প্রকাশ: সাধারণত \(\vec{r}\) দ্বারা অবস্থান ভেক্টরকে প্রকাশ করা হয়।
উদাহরণ: যদি মূলবিন্দু O হয় এবং P একটি বিন্দু হয়, তাহলে \(\vec{OP}\) ভেক্টরটি P বিন্দুর অবস্থান ভেক্টরকে নির্দেশ করে। এই ভেক্টরের মান \(|\vec{OP}|\) অথবা শুধু OP দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
৪. সরণ ভেক্টর (Displacement Vector)
সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য: সরণ ভেক্টর হলো একটি ভেক্টর যা কোনো বস্তুর আদি অবস্থান থেকে শেষ অবস্থানের পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। এটি বস্তুর স্থান পরিবর্তনকে পরিমাপ করে এবং এর দিক ও মান উভয়ই থাকে।
প্রকাশ: এটি প্রায়শই \(\vec{R}\) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
উদাহরণ: যদি কোনো বস্তু A বিন্দু থেকে B বিন্দুতে সরণ করে, তাহলে \(\vec{AB}\) ভেক্টরটি সরণ ভেক্টরকে নির্দেশ করে। এটি বস্তুর স্থানান্তরের দিক এবং দূরত্ব উভয়ই বোঝায়।
এই বিশেষ ভেক্টরগুলি পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারণা যেমন গতি, বল, ঘূর্ণন ইত্যাদি ব্যাখ্যা করার জন্য মৌলিক ভূমিকা পালন করে।