ট্রান্সফরমার: প্রকারভেদ, গঠন, কার্যপ্রণালী ও ব্যবহার
ট্রান্সফরমারের গঠন, সূত্র, Step-up ও Step-down ট্রান্সফরমারের পার্থক্য এবং ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। সহজ ভাষায় গাণিতিক উদাহরণ ও সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধান দেওয়া হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে।
ট্রান্সফরমার
যে যন্ত্রের সাহায্যে পর্যাবৃত্ত উচ্চ বিভবকে নিম্ন বিভবে বা নিম্ন বিভবকে উচ্চ বিভবে রূপান্তরিত করা যায় তাকে রূপান্তরক বা ট্রান্সফর্মার বলে। তাড়িতচৌম্বক আবেশের ওপর ভিত্তি করে এই যন্ত্র তৈরি করা হয়।
ট্রান্সফরমার, আধুনিক বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় এক অপরিহার্য যন্ত্র, যা বৈদ্যুতিক শক্তিকে এক বর্তনী থেকে অন্য বর্তনীতে আবেশের মাধ্যমে স্থানান্তর করে। এর প্রধান কাজ হলো ভোল্টেজকে প্রয়োজন অনুসারে বাড়ানো (স্টেপ-আপ) বা কমানো (স্টেপ-ডাউন), যার ফলে বিদ্যুতের দীর্ঘ দূরত্বের সঞ্চালন সহজ ও সাশ্রয়ী হয়।
ট্রান্সফরমারের গঠন ও কার্যপ্রণালী
|
| চিত্রঃ ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ও গৌণ কুণ্ডলী |
একটি ট্রান্সফরমার মূলত দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত: একটি নরম লোহার কোর এবং এই কোরের উপর জড়ানো দুটি পৃথক কুণ্ডলী।
- প্রাথমিক কুণ্ডলী (Primary coil): এটি ট্রান্সফরমারের ইনপুট প্রান্ত। এখানে ভোল্টেজ সরবরাহ করা হয়।
- গৌণ কুণ্ডলী (Secondary coil): এটি ট্রান্সফরমারের আউটপুট প্রান্ত। এখানে প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ পাওয়া যায়।
যখন প্রাথমিক কুণ্ডলীতে একটি পরিবর্তী ভোল্টেজ (AC) সরবরাহ করা হয়, তখন এর চারপাশে একটি পরিবর্তনশীল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই চৌম্বক ক্ষেত্রটি নরম লোহার কোরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গৌণ কুণ্ডলীকে ছেদ করে। ফলস্বরূপ, ফ্যারাডের আবেশ সূত্র অনুযায়ী, গৌণ কুণ্ডলীতে একটি আবিষ্ট ভোল্টেজ (induced voltage) উৎপন্ন হয়।
ফ্যারাডের আবেশ সূত্র: এই সূত্র অনুসারে, একটি কুণ্ডলীতে উৎপন্ন আবিষ্ট ভোল্টেজ, কুণ্ডলী দ্বারা বেষ্টিত চৌম্বক প্রবাহের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ, ভোল্টেজের পরিবর্তন নির্ভর করে প্রাথমিক এবং গৌণ কুণ্ডলীর প্যাঁচ সংখ্যার উপর।
ট্রান্সফরমারের সূত্র
ট্রান্সফরমারের ভোল্টেজ এবং প্যাঁচ সংখ্যার মধ্যে সম্পর্কটি একটি সরল সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়: তড়িৎ-চুম্বকীয় আবেশের নীতি অনুসারে, যখন কোনো কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তন হয়, তখন কুণ্ডলীতে একটি আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি (Induced Electromotive Force) উৎপন্ন হয়। এই আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তির মান কুণ্ডলীতে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক।
ফ্যারাডের সূত্র থেকে আমরা পাই:
$$E = - N \frac{d\Phi}{dt}$$
এখানে,
E = আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি
N = পাক সংখ্যা
\(\frac{d\Phi}{dt}\) = চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হার।
যেহেতু ট্রান্সফরমার একই কোর ব্যবহার করে, তাই প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি উভয় কুণ্ডলীতে চৌম্বক ফ্লাক্সের পরিবর্তনের হার (\(\frac{d\Phi}{dt}\)) একই থাকে।
প্রমাণ
|
|
চিত্রঃ স্টেপ আপ ও স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি কুন্ডলীর ভোল্টেজ, তড়িৎ প্রবাহ ও পাক সংখ্যা |
ধরি, প্রাইমারি কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা \(n_p\) এবং তাতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি \(E_p\)।
সেকেন্ডারি কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা \(n_s\) এবং তাতে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি \(E_s\)।
প্রাইমারি কুণ্ডলীর ক্ষেত্রে ফ্যারাডের সূত্র প্রয়োগ করে পাই:
$$E_p = - n_p \frac{d\Phi}{dt}$$
একইভাবে, সেকেন্ডারি কুণ্ডলীর ক্ষেত্রে পাই:
$$E_s = - n_s \frac{d\Phi}{dt}$$
এখন, সমীকরণ (2) কে সমীকরণ (3) দ্বারা ভাগ করে পাই:
\[ \frac{E_p}{E_s} = \frac{-n_p \frac{d\Phi}{dt}}{-n_s \frac{d\Phi}{dt}} \] যেহেতু \(\frac{d\Phi}{dt}\) উভয় কুণ্ডলীর জন্য সমান এবং শূন্য নয়, তাই এটিকে লব ও হর থেকে কেটে দেওয়া যায়। ফলে আমরা পাই:
$$ \frac{E_p}{E_s} = \frac{n_p}{n_s} $$
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে আবিষ্ট তড়িচ্চালক শক্তি কুণ্ডলীর পাক সংখ্যার সমানুপাতিক। এই সম্পর্কটি একটি আদর্শ ট্রান্সফরমারের জন্য প্রযোজ্য, যেখানে কোনো শক্তি অপচয় হয় না।
উক্ত সমীকরণে:
- \(E_p\) = প্রাথমিক কুণ্ডলীর ভোল্টেজ
- \(E_s\) = গৌণ কুণ্ডলীর ভোল্টেজ
- \(n_p\) = প্রাথমিক কুণ্ডলীর প্যাঁচ সংখ্যা
- \(n_s\) = গৌণ কুণ্ডলীর প্যাঁচ সংখ্যা
এই সমীকরণ থেকে বোঝা যায় যে, যদি \(n_s \gt n_p\) হয় অর্থাৎ গৌণ কুণ্ডলীর প্যাঁচ সংখ্যা (\(n_s\)) প্রাথমিক কুণ্ডলীর প্যাঁচ সংখ্যা (\(n_p\)) থেকে বেশি হয়, তবে গৌণ কুণ্ডলীতে ভোল্টেজ বেশি হবে। এটি একটি স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার।
বিপরীতভাবে, যদি \(n_s \lt n_p\) হয়, তবে গৌণ কুণ্ডলীতে ভোল্টেজ কম হবে। এটি একটি স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমার।
এছাড়াও, একটি আদর্শ ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক কুণ্ডলীর ক্ষমতা (Power) এবং গৌণ কুণ্ডলীর ক্ষমতা সমান হয়।
$$ P_p = P_s $$
যেহেতু, \(P = E \times I\) (ভোল্টেজ \(\times\) কারেন্ট)
$$ E_p I_p = E_s I_s $$
এখান থেকে বোঝা যায় যে, যখন ভোল্টেজ বাড়ে, কারেন্ট তখন কমে যায় এবং বিপরীতভাবে, যখন ভোল্টেজ কমে, কারেন্ট তখন বাড়ে। এই সম্পর্কটি বিদ্যুতের দীর্ঘ দূরত্বের সঞ্চালনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রান্সফরমারের প্রকারভেদ
ট্রান্সফরমারকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়:
-
ভোল্টেজ রূপান্তরের উপর ভিত্তি করে:
- স্টেপ-আপ ট্রান্সফরমার: এটি ইনপুট ভোল্টেজকে বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ ভোল্টেজ পাওয়ার সঞ্চালনে ব্যবহৃত হয়।
- স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমার: এটি ইনপুট ভোল্টেজকে কমিয়ে দেয়। গৃহস্থালী যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক্সে ব্যবহৃত হয়।
-
গঠনশৈলীর উপর ভিত্তি করে:
- কোর-টাইপ ট্রান্সফরমার (Core-type transformer): এতে কুণ্ডলী দুটি নরম লোহার কোরের দুটি পৃথক বাহুতে জড়ানো থাকে।
- শেল-টাইপ ট্রান্সফরমার (Shell-type transformer): এতে কুণ্ডলী দুটি কেন্দ্রীয় বাহুতে জড়ানো থাকে এবং কোর কুণ্ডলীকে ঘিরে থাকে। এটি তুলনামূলকভাবে বেশি কার্যকর।
স্টেপ-আপ এবং স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমারের পার্থক্য
| বিষয় | স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার | স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার |
|---|---|---|
| সংজ্ঞা | যে ট্রান্সফরমার ভোল্টেজ বৃদ্ধি করে তাকে স্টেপ আপ ট্রান্সফরমার বলে। | যে ট্রান্সফরমার ভোল্টেজ হ্রাস করে তাকে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমার বলে। |
| পাক সংখ্যা | গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা (ns) > মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা (np) | গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা (ns) < মুখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা (np) |
| ভোল্টেজ পরিবর্তন | আউটপুট ভোল্টেজ ইনপুট ভোল্টেজের চেয়ে বেশি হয়। | আউটপুট ভোল্টেজ ইনপুট ভোল্টেজের চেয়ে কম হয়। |
| তড়িৎপ্রবাহ | গৌণ কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ কম হয়। | গৌণ কুণ্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ বেশি হয়। |
| ব্যবহার | দূরদূরান্তে বিদ্যুৎ প্রেরণ এবং এক্স-রে যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়। | রেডিও, টেলিভিশন, চার্জার ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়। |
ট্রান্সফরমারের ব্যবহার
ট্রান্সফরমার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহু ক্ষেত্রে অপরিহার্য:
- বিদ্যুৎ সঞ্চালন: বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে উচ্চ ভোল্টেজে (স্টেপ-আপ) বিদ্যুৎ প্রেরণ করা হয় যাতে লাইনের রোধজনিত ক্ষতি কমানো যায়। এরপর, সাবস্টেশনে তা আবার কম ভোল্টেজে (স্টেপ-ডাউন) রূপান্তর করে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানো হয়।
- ইলেকট্রনিক্স: টিভি, চার্জার, পাওয়ার সাপ্লাই এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে প্রয়োজনীয় নিম্ন ভোল্টেজ সরবরাহের জন্য স্টেপ-ডাউন ট্রান্সফরমার ব্যবহৃত হয়।
- শিল্প কারখানা: ওয়েল্ডিং মেশিন, হিটিং যন্ত্র এবং অন্যান্য শিল্প কারখানার যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়।
🧮 উদাহরণ
একটি ট্রান্সফর্মারের মুখ্য কুন্ডলীতে ভোল্টেজ \( E_p = 5 \,V \) এবং প্রবাহ \( I_p = 3\,A \)। গৌণ কুন্ডলীর ভোল্টেজ \( E_s = 10\,V \) হলে, গৌণ কুন্ডলীর প্রবাহ নির্ণয় কর:
\[ E_p \cdot I_p = E_s \cdot I_s \]
\[ 5 \cdot 3 = 10 \cdot I_s \Rightarrow I_s = \frac{15}{10} = 1.5\,A \]
উত্তর: গৌণ কুন্ডলীর প্রবাহ হবে \( 1.5\,A \)।
সৃজনশীল প্রশ্ন ও সমাধান
সৃজনশীল প্রশ্নঃ চিত্র থেকে প্রশ্নগুলোর উত্তর :
সৃজনশীল প্রশ্নের সমাধানঃ
(ক) সলিনয়েড কী?
সলিনয়েড হলো লম্বা নলাকার তারের কুণ্ডলী, যেটিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলে চৌম্বক ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এটি মূলত একধরনের তারের কুণ্ডলী।
(খ) উচ্চধাপী ট্রান্সফরমারের দুটি বৈশিষ্ট্য :
১. সেকেন্ডারি কয়েলের ভোল্টেজ প্রাইমারি কয়েলের ভোল্টেজের তুলনায় বেশি হয়।
২. প্রাইমারি কয়েলের পাকসংখ্যা সেকেন্ডারি কয়েলের পাকসংখ্যার তুলনায় কম হয়।
(গ) এর মান কত?
ট্রান্সফরমারের সমীকরণ থেকে পাইঃ
\(\frac{E_p}{E_s} = \frac{n_p}{n_s}\)
এখানে,
\(E_p = 200V, \quad E_s = 4000V, \quad n_p = 200\)
\(\frac{200}{4000} = \frac{200}{n_s}\)
\(\frac{1}{20} = \frac{200}{n_s}\)
\(n_s = 200 \times 20 = 4000\)
👉 নির্ণেয় সেকেন্ডারি কুন্ডলীর পাক সংখ্যা 4000।
(ঘ) দেখাও যে, মুখ্য ও গৌণ কুণ্ডলীর ভোল্টেজ তাদের পাকসংখ্যার সমানুপাতিক।
দেওয়া আছে
- মূখ্য কুণ্ডলীর ভোল্টেজ: \( E_P = 200\,\text{V} \)
- মূখ্য কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা: \( n_P = 200 \)
- গৌণ কুণ্ডলীর ভোল্টেজ: \( E_S = 4000\,\text{V} \)
- গৌণ কুণ্ডলীর পাক সংখ্যা: \( n_S = 4000 \)
অনুপাত নির্ণয়
\[ \frac{E_P}{E_S} = \frac{200}{4000} = \frac{1}{20} \]
\[ \frac{n_P}{n_S} = \frac{200}{4000} = \frac{1}{20} \]
উভয় অনুপাতই সমান।
এটি আদর্শ ট্রান্সফর্মারের মৌলিক নীতি: \[ \frac{E_S}{E_P} = \frac{n_S}{n_P} \] একই কথা বিপরীত অনুপাতে লিখলে \[ \frac{E_P}{E_S} = \frac{n_P}{n_S} \]
অর্থাৎ, প্রাইমারি (মুখ্য) ও সেকেন্ডারি (গৌণ) কুণ্ডলীর ভোল্টেজ তাদের পাকসংখ্যার সমানুপাতিক।
ট্রান্সফরমার সংক্রান্ত সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সৃজনশীল প্রশ্ন
উদ্দীপক:
|
| চিত্রটি লক্ষ কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। |
ক. কয়েলে যে নরম লোহার টুকরা থাকে তাকে কী বলে?
খ. ট্রান্সফর্মার কী করে?
গ. ট্রান্সফর্মারটির মুখ্য কুণ্ডলীর প্রবাহমাত্রা নির্ণয় কর।
ঘ. ট্রান্সফর্মার ব্যবহারে ক্ষমতার পরিমাণ ধ্রুব থাকে- উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ক. কয়েলে যে নরম লোহার টুকরা থাকে তাকে কী বলে?
কয়েলে যে নরম লোহার টুকরা থাকে তাকে মজ্জা (Core) বলা হয়। এটি চৌম্বক ক্ষেত্রকে কেন্দ্রীভূত করে শক্তি স্থানান্তরে সহায়তা করে।
খ. ট্রান্সফর্মার কী করে?
ট্রান্সফর্মার একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র যা তাড়িতচৌম্বক আবেশ নীতি ব্যবহার করে একটি বর্তনী থেকে অন্য বর্তনীতে বৈদ্যুতিক শক্তি স্থানান্তর করে। এটি ভোল্টেজকে কমিয়ে বা বাড়িয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের মাত্রা পরিবর্তন করে।
গ. ট্রান্সফর্মারটির মুখ্য কুণ্ডলীর প্রবাহমাত্রা নির্ণয় কর।
মুখ্য কুণ্ডলীর প্রবাহমাত্রা \( I_p \) নির্ণয় করতে আমরা ট্রান্সফরমারের ক্ষমতা সংরক্ষণের নীতি ব্যবহার করব। আদর্শ ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে, মুখ্য কুণ্ডলীর ক্ষমতা \( (P_p) \) এবং গৌণ কুণ্ডলীর ক্ষমতা \( (P_s) \) সমান হয়।
ক্ষমতার সূত্র: \( P = E \times I \)
ক্ষমতা সংরক্ষণ নীতি:
\( P_p = P_s \)
বা \( E_p I_p = E_s I_s \)
আমরা ট্রান্সফরমারের ভোল্টেজ ও প্যাঁচ সংখ্যার অনুপাত জানি:
\( \frac{E_p}{E_s} = \frac{n_p}{n_s} \)
এই সূত্র ব্যবহার করে আমরা পাই:
\( I_p = I_s \times \frac{n_s}{n_p} \)
প্রদত্ত মানগুলো:
গৌণ কুণ্ডলীর প্যাঁচ সংখ্যা \( (n_s) = 121 \),
মুখ্য কুণ্ডলীর প্যাঁচ সংখ্যা \( (n_p) = 11 \),
গৌণ কুণ্ডলীর প্রবাহমাত্রা \( (I_s) = 5.5 \, A \),
গণনা:
\( I_p = 5.5 \times \frac{121}{11} \)
\( I_p = 5.5 \times 11 \)
\( I_p = 60.5 \, A \)
সুতরাং, মুখ্য কুণ্ডলীর প্রবাহমাত্রা হলো \(60.5 \,A\)
ঘ. ট্রান্সফর্মার ব্যবহারে ক্ষমতার পরিমাণ ধ্রুব থাকে– উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর
এই উক্তিটি একটি আদর্শ ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে সত্য। শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুসারে, শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। একটি আদর্শ ট্রান্সফরমার কোনো শক্তি নষ্ট করে না, তাই ইনপুট ক্ষমতা \( (P_{in}) \) এবং আউটপুট ক্ষমতা \( (P_{out}) \) সমান থাকে।
\( P_{in} = P_{out} \)
\( E_p \times I_p = E_s \times I_s \)
পাকসংখ্যার অনুপাত:
\(\frac{E_p}{E_s} = \frac{n_p}{n_s}\)
বা, \(\frac{E_p}{E_s}= \frac{11}{121}\)
বা, \(\frac{E_p}{E_s}= \frac{1}{11}\)
অতএব, \(E_s = 11 \times E_p\)
প্রবাহমাত্রা:
মুখ্য কুন্ডলীর প্রবাহমাত্রা: \( I_p = 60.5 \, \text{A} \)
গৌণ কুন্ডলীর প্রবাহমাত্রা: \( I_s = 5.5 \, \text{A} \)
ক্ষমতা নির্ণয়:
মুখ্য কুন্ডলীর ক্ষমতা:
\( P_1 = E_p \times Ip = 60.5 E_p \)
গৌণ কুন্ডলীর ক্ষমতা:
\( P_2 = E_s \times I_s = 11 E_p \times 5.5 = 60.5 E_p \)
যেহেতু \( P1 = P2 \), তাই ট্রান্সফরমারটি আদর্শ এবং শক্তি সংরক্ষিত থাকে। অর্থাৎ, ট্রান্সফর্মার ব্যবহারে ক্ষমতার পরিমাণ ধ্রুব থাকে
উপসংহার
ট্রান্সফরমার আধুনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য যন্ত্র। এটি ভোল্টেজ ও তড়িৎপ্রবাহকে রূপান্তর করে ক্ষমতা ধ্রুব রাখে। Step-up ট্রান্সফরমার দূরদূরান্তে বিদ্যুৎ প্রেরণে সহায়তা করে এবং Step-down ট্রান্সফরমার ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী ভোল্টেজ কমিয়ে গৃহস্থালি ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তাই বিদ্যুৎ পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতিতে ট্রান্সফরমারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ট্রান্সফরমার শুধুমাত্র একটি যান্ত্রিক যন্ত্র নয়, এটি আধুনিক বিদ্যুতের মেরুদণ্ড। এর কার্যকারিতা এবং স্থিতিশীলতা আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরও নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।




