Contexts
- তাপগতিবদ্যিার দ্বিতীয় সূত্রের বিবৃতি
- প্রত্যাবর্তী ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া
ভূমিকা
তাপগতিবিদ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যা তাপ এবং শক্তির মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে। এটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন প্রত্যাবর্তী এবং অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে। প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, যেখানে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া কখনও তার শুরু অবস্থায় ফিরে আসে না।
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র
আমরা জানি, যান্ত্রিক শক্তি, আলোক শক্তি, শব্দ শক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন
প্রকার শক্তি অতি সহজে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। কিন্তু তাপ শক্তিকে
অতি সহজে অন্য শক্তিতে রূপান্তর করা যায় না। তাপশক্তিকে কাজ করানোর জন্য
প্রয়োজন একটা যান্ত্রিক ব্যবস্থার। এ যান্ত্রিক ব্যবস্থা হলো তাপ ইঞ্জিন।
ফরাসী প্রকৌশলী সাদি কার্নো (1796-1832) এ তাপ ইঞ্জিন নিয়ে গবেষণা করেন এবং
তিনি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, তাপকে কখনই সম্পূর্ণরূপে কাজে রূপান্তর করা
সম্ভব নয়।
বিভিন্ন বিজ্ঞানী তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত
করেছেন। প্রত্যেকের প্রস্তাবনার মূলভাব একই এবং তা হচ্ছে তাপ কখনই
স্বতঃস্ফূর্তভাবে শীতল বস্তু হতে উষ্ণ বস্তুতে স্থানান্তর হতে পারে না। এসব
প্রস্তাবনার মধ্যে বিজ্ঞানী ক্লসিয়াসের প্রস্তাবনাকে নিখুত ও উন্নত বলে
গণ্য করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রক্রিয়া সংঘটিত হওয়ার শর্ত ও সম্ভাবনা
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র হতে পাওয়া যায়। নিচে সূত্রটির বিবৃতি দেওয়া
হলো:
- ক্লসিয়াসের বিবৃতি (Clausius's Statement): বাইরের কোনো শক্তির সাহায্য ছাড়া কোনো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের পক্ষে নিম্ন তাপমাত্রার কোনো বস্তু হতে উচ্চ তাপমাত্রার কোনো বস্তুতে তাপের স্থানান্তর সম্ভব নয়। অথবা, তাপ আপনা আপনি শীতল বস্তু হতে উষ্ণ বস্তুতে স্থানান্তর হয় না।
- কার্নোর বিবৃতি (Carnot's Statement): কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপশক্তিকে সম্পূর্ণভাবে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করার মতো যন্ত্র তৈরি সম্ভব নয়।
- প্লাঙ্কের বিবৃতি (Planck's Statement): কোনো তাপ উৎস হতে অনবরত তাপ শোষণ করবে এবং তা সম্পূর্ণরূপে কাজে রূপান্তরিত হবে এরূপ একটি তাপ ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব নয়।
- কেলভিনের বিবৃতি (Kelvin's Statement): কোনো বস্তুকে তার পারিপার্শ্বের শীতলতম অংশ হতে অধিকতর শীতল করে শক্তির অবিরাম সরবরাহ পাওয়া সম্ভব নয়।
প্রত্যাবর্তী ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া | Reversible and Irreversible Process
কোনো সিস্টেম যখন এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় যায়, তখন অবস্থার এ পরিবর্তন দুই ভাবে সংঘটিত হয়। যথা- ১. প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া (Reversible Process) এবং ২. অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া (Irreversible Process)
প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া (Reversible Process):
প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া এমন একটি প্রক্রিয়া, যা পারিপার্শ্বের কোনোরূপ
পরিবর্তন ছাড়াই বিপরীতমুখী হয়ে আদি অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করতে পারে।
ধরা যাক, কোনো একটি প্রক্রিয়ার কার্যনির্বাহক বস্তু স্থির তাপমাত্রায় A
অবস্থা হতে পরিবর্তিত হয়ে B অবস্থায় গেল (চিত্র ) এবং এ পরিবর্তনে কিছু তাপ
শোষণ করল ও কিছু বাহ্যিক কার্য সম্পাদন করল। তাপগতিবিদ্যায় এ প্রক্রিয়াটি
হলো সম্মুখগামী প্রক্রিয়া।
অপরপক্ষে, B অবস্থা হতে বস্তুটি যদি বিপরীতক্রমে সমপরিমাণ তাপ বর্জন করে
এবং একই পরিমাণ বাহ্যিক কার্য সম্পাদন করে A অবস্থায় ফিরে আসে, তবে
তাপগতিবিদ্যায় এ প্রক্রিয়া হলো প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া।
প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া : যে প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করে এবং সম্মুখগামী ও বিপরীতমুখী প্রক্রিয়ার প্রতিস্তরে তাপ ও কাজের ফলাফল সমান ও বিপরীত হয়। সেই প্রক্রিয়াকে প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে। বিপরীতগামী প্রক্রিয়া। সামগ্রিকভাবে সম্মুখগামী ও বিপরীতগামী প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে সৃষ্ট প্রক্রিয়াই হলো প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া।
প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:
- প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া ধীর ও স্বতঃস্ফূর্ত নয়।
- এ প্রক্রিয়ায় সিস্টেমে তাপগতীয় সাম্যাবস্থা বজায় থাকে।
- এ প্রক্রিয়ায় অবক্ষয়ী ফলাফল দৃষ্ট হয় না।
- কার্যনির্বাহক বস্তু প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসে।
অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া (Irreversible Process) :
প্রকৃতিতে যে সমস্ত পরিবর্তন বা রূপান্তর আপনা-আপনি ঘটে সেগুলো স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন। এ পরিবর্তনগুলো একমুখী অর্থাৎ এসব পরিবর্তনকে বিপরীত দিকে প্রত্যাবর্তন করে প্রাথমিক অবস্থায় আনা যায় না। তাই সকল স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনই একমুখী প্রক্রিয়া ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া। সকল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াই অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া।
অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া : যে প্রক্রিয়া বিপরীতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না তাকে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া বলে।
অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:
- অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া দ্রুত, স্বতঃস্ফূর্ত এবং একমুখী।
- এ প্রক্রিয়ায় সিস্টেমে তাপীয় সাম্যাবস্থা বজায় থাকে না।
- এ প্রক্রিয়ায় অবক্ষয়ী ফলাফল দৃষ্ট হয়।
- এ প্রক্রিয়ায় সিস্টেমকে কখনই আদি অবস্থায় ফিরে আনা যায় না।
উপসংহার
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র আমাদের জীবনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করে। প্রত্যাবর্তী ও অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে আমরা তাপের পরিবর্তন এবং কাজের মধ্যে সম্পর্ক দেখতে পাই, যা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়।