বায়ো-স্যাভার্ট বা ল্যাপ্লাস সূত্র: বৈদ্যুতিক চৌম্বকত্বের মূলনীতি ও ব্যবহার

বায়ো-স্যাভার্ট বা ল্যাপ্লাস সূত্র: বৈদ্যুতিক চৌম্বকত্বের মূলনীতি ও ব্যবহার

বিজ্ঞানী ওয়েরস্টেড প্রমাণ করেন যে, তড়িৎবাহী পরিবাহীর চারপার্শ্বে একটি চৌম্বকক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। এ চৌম্বকক্ষেত্রের চৌম্বকীয় আবেশ বা চৌম্বক প্রাবল্য নির্ণয়ের জন্য বিজ্ঞানী ল্যাপ্লাস একটি সূত্র প্রদান করেন। পরবর্তীতে 1820 সালে ল্যাপ্লাসের সূত্রটিকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করে সূত্রটির প্রমাণ করেন দুজন বিজ্ঞানী জিন ব্যাপ্টিস্ট বায়োর্ট ও ফেলিক্স স্যাভার্ট। এজন্য এ সূত্রটিকে বায়ো-স্যাভার্ট-এর সূত্র বলা হয়। তাঁরা চৌম্বক প্রাবল্যকে চৌম্বক ফ্লাস্ক ঘনত্ব হিসেবে পরিমাপ করেন।

সূত্র

নির্দিষ্ট মাধ্যমে ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের কোনো পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে এর আশেপাশে কোনো বিন্দুতে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের মান, প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সমানুপাতিক, পরিবাহীর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক, পরিবাহীর মধ্য বিন্দু হতে ঐ বিন্দুর সংযোগ সরলরেখা এবং পরিবাহীর অন্তর্ভুক্ত কোণের সাইনের সমানুপাতিক এবং পরিবাহীর মধ্য বিন্দু হতে ঐ বিন্দুর দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।

বাখ্যাঃ

মনে কর, AB একটি তড়িৎবাহী তার যার ক্ষুদ্র অংশের দৈর্ঘ্য dl। এ তারে I পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহের দিকন এর মধ্যবিন্দু O হতে θ কোণে r দূরত্বে অবস্থিত P বিন্দুতে চৌম্বকক্ষেত্রের মান নির্ণয় করতে হবে।

তড়িৎ প্রবাহের ফলে P বিন্দুতে চৌম্বক ক্ষেত্রের মান dB হলে, বায়ো-স্যাভার্ট-এর সূত্রানুসারে:

১. dB ∝ I;

২. dB ∝ dl;

৩. dB ∝ sin θ;

৪. \(dB ∝ \frac{1}{r^{2}};\)

যখন dl, r এবং θ স্থির।

যখন I, r এবং θ স্থির।

যখন I, dl এবং r স্থির।

যখন I, dl এবং θ স্থির।

সূত্রমতে, \[ dB \propto K \cdot \frac{I \cdot dl \cdot \sin\theta}{r^2} \] এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক, যার মান মাধ্যমের প্রকৃতি এবং রাশিগুলোর একের ওপর নির্ভর করে।
বায়ু বা শূন্য মাধ্যমের জন্য, \( K = \frac{\epsilon_{0}}{4 \pi} \) ।

বায়োট-স্যাভার্টের সূত্র থেকে আমরা জানি যে, একটি কারেন্ট বহনকারী ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের তড়িৎ উপাদানের কারণে কোনো বিন্দুতে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের মান হয়:

\[ dB = \frac{\mu_0}{4\pi} \cdot \frac{I \cdot dl \cdot \sin\theta}{r^2} \]

এখানে,

  • dB হলো ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের তড়িৎ উপাদানের চৌম্বক ক্ষেত্র,
  • μ0 হলো চৌম্বক শূন্যস্থানের পারমিয়াবিলিটি,
  • I হলো কারেন্ট (তড়িৎ প্রবাহ),
  • dl হলো কুণ্ডলীর ক্ষুদ্র অংশের দৈর্ঘ্য,
  • θ হলো তড়িৎ প্রবাহের দিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যবর্তী কোণ,
  • r হলো কুণ্ডলীর কেন্দ্র থেকে ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের তড়িৎ উপাদানের দূরত্ব।

বৃত্তাকার কুণ্ডলীর কেন্দ্রে চৌম্বক ক্ষেত্রের মানের সূত্র

বায়ো-স্যাভার্ট বা ল্যাপ্লাস-এর সূত্র | Biot-Savart's or Laplace's Law থেকে লিখতে পারি, \[ dB = \frac{\mu_0}{4\pi} \cdot \frac{I \cdot dl \cdot \sin\theta}{r^2} \]

ধাপ ১: বৃত্তাকার কুণ্ডলীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা

কুণ্ডলীর ক্ষেত্রে, আমরা পুরো বৃত্তটি একটি ছোট অংশ হিসেবে নিতে পারি এবং θ কোণটি 90° হবে, অর্থাৎ sin 90° = 1

তাহলে বায়োট-স্যাভার্টের সূত্র থেকে:

\[ dB = \frac{\mu_0}{4\pi} \cdot \frac{I \cdot dl}{r^2} \]

ধাপ ২: পূর্ণ বৃত্তের জন্য সমাকলন (Integration)

এখন, পুরো কুণ্ডলীটিকে dl-এর উপর সমাকলন করতে হবে। বৃত্তাকার কুণ্ডলীতে প্রতিটি তড়িৎ উপাদান একই ধরণের চৌম্বক ক্ষেত্র কেন্দ্রীয় বিন্দুতে সৃষ্টি করে। তাই আমরা পুরো বৃত্তের জন্য সমাকলন করলে পাই:

\[ B = \int dB = \frac{\mu_0 I}{4\pi r^2} \int dl \]

যেখানে \( \int dl \) হলো বৃত্তের পরিধি, L = 2πr। তাই:

\[ B = \frac{\mu_0 I}{4\pi r^2} \cdot 2\pi r \]

এখানে r-এর একটি চলে যায়, ফলে পাই:

\[ B = \frac{\mu_0 I}{2r} \]

ধাপ ৩: মোট পাক সংখ্যার জন্য ক্ষেত্রের সংযোজন

কুণ্ডলীর ক্ষেত্রে, মোট N সংখ্যা পাক আছে, যার ফলে এই ক্ষেত্রটি N-গুণ বৃদ্ধি পাবে। তাই মোট চৌম্বক ক্ষেত্র হবে:

\[ B = \frac{\mu_0 \cdot N \cdot I}{2r} \]

এটি হলো বৃত্তাকার কুণ্ডলীর কেন্দ্রে চৌম্বক ক্ষেত্রের মানের সূত্র।

সৃজনশীল প্রশ্ন ও সমাধান

একটি বৃত্তাকার কুন্ডলীর পাক সংখ্যা 40 এবং কেন্দ্রে চৌম্বক ক্ষেত্রের মান 10µT।

  • (i) কুণ্ডলীর মধ্য দিয়ে 0.44 A তড়িৎ প্রবাহ চললে এর ব্যাসার্ধ নির্ণয় কর।
  • (ii) নির্দিষ্ট পরিমাণ পাক সংখ্যা ও তড়িৎ প্রবাহের ক্ষেত্রে ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ করা হলে বৃত্তের কেন্দ্রে চৌম্বক ক্ষেত্রের মান বৃদ্ধি পাবে কত?

সমাধান:

(i) সূত্র অনুযায়ী, \( B = \frac{\mu_0 \cdot N \cdot I}{2r} \)

এখানে, \( B = 10 \mu T = 10 \times 10^{-6} T \)

যদি \( \mu_0 = 4\pi \times 10^{-7} Tm/A \) হয়, তাহলে:

\[ 10 \times 10^{-6} = \frac{4\pi \times 10^{-7} \cdot 40 \cdot 0.44}{2r} \]

এখন, রূপান্তর করার পর:

\[ 10 \times 10^{-6} = \frac{4\pi \times 10^{-7} \cdot 17.6}{2r} \]

এখন আমরা r এর জন্য সমাধান করতে পারিঃ

\[ r = \frac{4\pi \times 10^{-7} \cdot 17.6}{2 \cdot 10 \times 10^{-6}} = \frac{4\pi \times 17.6}{20} \]

যার মান প্রাপ্তির পর:

\( r \approx 0.11 \, \text{m} \) (প্রায়)

(ii) ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ হলে, \( r = 2r \) হয়। তাই নতুন চৌম্বক ক্ষেত্র হবে:

\[ B' = \frac{\mu_0 \cdot N \cdot I}{2(2r)} = \frac{1}{2} \cdot B \]

অতএব, নতুন চৌম্বক ক্ষেত্র হবে:

\[ B' = \frac{10 \mu T}{2} = 5 \mu T \]

সুতরাং, ব্যাসার্ধ দ্বিগুণ করার ফলে চৌম্বক ক্ষেত্রের মান অর্ধেক হয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন