ভূমিকাঃ তাপ ও তাপমাত্রা পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে। তাপমাত্রা একটি বস্তুর তাপীয় অবস্থাকে নির্দেশ করে, যা অন্যান্য বস্তুর সাথে তাপ বিনিময়ের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। থার্মোমিটারসহ বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এবং বিভিন্ন বস্তুর তাপীয় সমতা ও সাম্যাবস্থার মতো বিষয়গুলো জানা যায়। এই আলোচনায়, তাপমাত্রা মাপার পদ্ধতি, তাপীয় সমতা, তাপীয় ইঞ্জিন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ধারণাগুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তাপ ও তাপমাত্রা সম্পর্কিত রাশিগুলো
১. তাপমাত্রা (Temperature)
তাপমাত্রা একটি ভৌত রাশি যা গরম ও ঠান্ডার পরিমাণ প্রকাশ করে। এটি থার্মোমিটার দ্বারা পরিমাপ করা হয় এবং সাধারণত সেলসিয়াস, ফারেনহাইট, বা কেলভিন স্কেলে প্রকাশ করা হয়।
২. থার্মোমিটার (Thermometer)
থার্মোমিটার একটি যন্ত্র যা তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন পারদ থার্মোমিটার, ডিজিটাল থার্মোমিটার, এবং ইনফ্রারেড থার্মোমিটার।
৩. তাপীয় সমতা (Thermal Equilibrium)
যখন দুটি বা ততোধিক বস্তু তাপ বিনিময়ের মাধ্যমে একই তাপমাত্রায় পৌঁছে যায়, তখন তাদেরকে তাপীয় সমতায় বলা হয়। এই অবস্থায়, তাপের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
৪. নিম্ন স্থির বিন্দু (Lower Fixed Point/Ice Point)
নিম্ন স্থির বিন্দু হলো সেই তাপমাত্রা যেখানে বিশুদ্ধ পানি বরফে পরিণত হয়, যা সাধারণত 0°C বা 273.15 K।
৫. ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু (Upper Fixed Point/Steam Point)
ঊর্ধ্ব স্থির বিন্দু হলো সেই তাপমাত্রা যেখানে বিশুদ্ধ পানি বাষ্পে পরিণত হয়, যা সাধারণত 100°C বা 373.15 K।
৬. পানির ত্রৈধ বিন্দু (Triple Point of Water)
পানির ত্রৈধ বিন্দু হলো সেই তাপমাত্রা এবং চাপ যেখানে পানি একই সাথে কঠিন, তরল, এবং গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে। এটি 0.01°C এবং 611.657 প্যাসকেল চাপের অধীনে ঘটে।
৭. তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক (Mechanical Equivalent of Heat)
তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক হলো সেই মান যা তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। 1 ক্যালরি তাপ = 4.184 জুল কাজ।
৮. ধ্রুব আয়তন প্রক্রিয়া (Constant Volume Process)
ধ্রুব আয়তন প্রক্রিয়ায়, একটি সিস্টেমের আয়তন অপরিবর্তিত থাকে এবং তাপমাত্রা ও চাপ পরিবর্তিত হয়।
৯. মোলার আপেক্ষিক তাপ (Molar Heat Capacity)
মোলার আপেক্ষিক তাপ হলো সেই তাপের পরিমাণ যা 1 মোল পদার্থের তাপমাত্রা 1°C বা 1 K বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন হয়।
১০. স্থির চাপে মোলার আপেক্ষিক তাপ (Molar Heat Capacity at Constant Pressure)
এটি হলো সেই তাপের পরিমাণ যা 1 মোল পদার্থের তাপমাত্রা 1°C বা 1 K বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন হয় যখন চাপ স্থির থাকে।
১১. স্থির আয়তনে মোলার আপেক্ষিক তাপ (Molar Heat Capacity at Constant Volume)
এটি হলো সেই তাপের পরিমাণ যা 1 মোল পদার্থের তাপমাত্রা 1°C বা 1 K বৃদ্ধি করতে প্রয়োজন হয় যখন আয়তন স্থির থাকে।
১২. প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া (Reversible Process)
প্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া হলো সেই প্রক্রিয়া যা খুব ধীরে ধীরে ঘটে এবং প্রতিটি ধাপে সিস্টেমটি সমতায় থাকে, ফলে প্রক্রিয়াটি বিপরীতমুখী হতে পারে।
১৩. অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া (Irreversible Process)
অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া হলো সেই প্রক্রিয়া যা দ্রুত ঘটে এবং সিস্টেমটি সমতায় থাকে না, ফলে প্রক্রিয়াটি বিপরীতমুখী হতে পারে না।
১৪. ইঞ্জিনের দক্ষতা (Efficiency of Engine)
ইঞ্জিনের দক্ষতা হলো সেই অনুপাত যা ইঞ্জিনের দ্বারা সম্পাদিত কাজ এবং ইঞ্জিনে সরবরাহিত তাপের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।
১৫. তাপীয় ইঞ্জিন (Thermal Engine)
তাপীয় ইঞ্জিন হলো সেই যন্ত্র যা তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। উদাহরণস্বরূপ, অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন।
১৬. কার্যকৃত সহগ (Coefficient of Performance)
কার্যকৃত সহগ হলো সেই অনুপাত যা একটি তাপ পাম্প বা রেফ্রিজারেটরের দ্বারা সরবরাহিত তাপ এবং তাপ পাম্প বা রেফ্রিজারেটরের দ্বারা ব্যবহৃত কাজের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।
১৭. এনট্রপি (Entropy)
এনট্রপি হলো একটি থার্মোডাইনামিক রাশি যা একটি সিস্টেমের বিশৃঙ্খলার পরিমাণ প্রকাশ করে। এটি তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের সাথে সম্পর্কিত।