সকল সূত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি
ভূমিকা
তড়িৎ প্রবাহ এবং চুম্বকত্বের মধ্যকার সম্পর্ক আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই বিষয়টির মূল ভিত্তি হলো ১৮২০ সালে ওয়েস্টেডের আবিষ্কার, যেখানে তিনি দেখান যে তড়িৎ প্রবাহিত হলে তার চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই আবিষ্কারটি তড়িৎ ও চৌম্বকতার সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠিত করে, যা পরবর্তীতে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজমের বিকাশ ঘটায়। বর্তমান অধ্যায়ে তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া, চৌম্বকত্বের বিভিন্ন সূত্র এবং এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি আলোচনা করা হবে।
তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে তড়িৎ প্রবাহের কারণে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। ১৮২০ সালে হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান ওয়েস্টেড প্রথম লক্ষ্য করেন যে, যখন কোনো তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হয়, তখন সেই তারের আশেপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়, যা কাছাকাছি স্থাপিত চুম্বক জাতীয় পদার্থকে প্রভাবিত করতে পারে।
ওয়েস্টেডের আবিষ্কার ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজমের ভিত্তি স্থাপন
করে। তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়ার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হলোঃ
চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎপত্তি
বায়োট-সাভার্ট সূত্র
অ্যামপিয়ারের সূত্র
সলিনয়েডের চৌম্বক ক্ষেত্র
তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া বিভিন্ন প্রযুক্তির ভিত্তি, যেমন বৈদ্যুতিক মোটর, জেনারেটর এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক যন্ত্রপাতি তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
বায়োস্যাভার্ট সূত্র
বায়োস্যাভার্ট সূত্র অনুযায়ী, একটি বিদ্যুৎবাহী পরিবাহীর চারপাশে চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য নির্ণয় করা যায়। সূত্রটি হলো:
\(d\vec{B} = \frac{\mu_0}{4\pi} \frac{I d\vec{l} \times \vec{r}}{r^3}\)
এখানে,
- \(d\vec{B}\) = চৌম্বক ক্ষেত্রের ক্ষুদ্র উপাংশ
- \(\mu_0\) = শূন্য মাধ্যমে চৌম্বক প্রবেশ্যতা
- \(I\) = বিদ্যুৎ প্রবাহ
- \(d\vec{l}\) = পরিবাহীর ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য
- \(\vec{r}\) = বিন্দু থেকে পরিবাহীর দূরত্ব
ঋজু তারের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্রের মান নির্ণয়
ঋজু তারের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্রের মান নির্ণয়ের সূত্রটি হলো:
\(B = \frac{\mu_0 I}{2 \pi r}\)
এখানে,
- \(B\) = চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য
- \(\mu_0\) = শূন্য মাধ্যমে চৌম্বক প্রবেশ্যতা
- \(I\) = বিদ্যুৎ প্রবাহ
- \(r\) = তার থেকে নির্দিষ্ট বিন্দুর দূরত্ব
বৃত্তাকার কুন্ডলী তারের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্রের মান নির্ণয়
বৃত্তাকার কুন্ডলী তারের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্রের মান নির্ণয়ের সূত্রটি হলো:
\(B = \frac{\mu_0 N I}{2 R}\)
এখানে,
- \(B\) = চৌম্বকক্ষেত্রের প্রাবল্য
- \(\mu_0\) = শূন্য মাধ্যমে চৌম্বক প্রবেশ্যতা
- \(N\) = কুন্ডলীর পাক সংখ্যা
- \(I\) = বিদ্যুৎ প্রবাহ
- \(R\) = কুন্ডলীর ব্যাসার্ধ
চৌম্বক বল নির্ণয়ের সূত্র
চৌম্বক বল নির্ণয়ের সূত্রটি হলো:
\(F = q (\vec{v} \times \vec{B})\)
\(F = qvB \, sin\theta \)
\(F = qvB;\) যখন, \( \theta = 90^{0}\)
এখানে,
- \(F\) = চৌম্বক বল
- \(q\) = চার্জের মান
- \(\vec{v}\) = চার্জের বেগ
- \(\vec{B}\) = চৌম্বক ক্ষেত্র
তড়িৎবাহী তারে ক্রিয়াশীল বল নির্ণয়ের সূত্র
তড়িৎবাহী তারে ক্রিয়াশীল বল নির্ণয়ের সূত্রটি হলো:
\(F = I L B \sin \theta\)
এখানে,
- \(F\) = চৌম্বক বল
- \(I\) = বিদ্যুৎ প্রবাহ
- \(L\) = তারের দৈর্ঘ্য
- \(B\) = চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রাবল্য
- \(\theta\) = বিদ্যুৎ প্রবাহ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যবর্তী কোণ
দুইটি সমান্তরাল তারে ক্রিয়াশীল বল নির্ণয়ের সূত্র
দুইটি সমান্তরাল তারে ক্রিয়াশীল বল নির্ণয়ের সূত্রটি হলো:
\(F = \frac{\mu_0 I_1 I_2 L}{2 \pi d}\)
এখানে,
- \(F\) = ক্রিয়াশীল বল
- \(\mu_0\) = শূন্য মাধ্যমে চৌম্বক প্রবেশ্যতা
- \(I_1\) এবং \(I_2\) = দুইটি তারের বিদ্যুৎ প্রবাহ
- \(L\) = তারের দৈর্ঘ্য
- \(d\) = দুইটি তারের মধ্যবর্তী দূরত্ব
হল বিভব
\(V_H = vBd\)
দুইটি সমান্তরাল তারের একক দৈর্ঘ্যের ক্রিয়াশীল বল নির্ণয়ের সূত্র
দুইটি সমান্তরাল তারের একক দৈর্ঘ্যের ক্রিয়াশীল বল নির্ণয়ের সূত্রটি হলো:
\(F = \frac{\mu_0 I_1 I_2}{2 \pi d}\)
এখানে,
- \(F\) = একক দৈর্ঘ্যের উপর ক্রিয়াশীল বল
- \(\mu_0\) = শূন্য মাধ্যমে চৌম্বক প্রবেশ্যতা
- \(I_1\) এবং \(I_2\) = দুইটি তারের বিদ্যুৎ প্রবাহ
- \(d\) = দুইটি তারের মধ্যবর্তী দূরত্ব
হল বিভব
\(V_H = vBd\)
এখানে,
- \(V_H \) = হল বিভব
- \(v \) = চার্জের বেগ
শূন্য মাধ্যমে চৌম্বক প্রবেশ্যতার মান \(4\pi \times 10 ^ {- 7} \, Tm A ^ {- 1}\)
চৌম্বক ক্ষেত্র \(B \) এর মানের একক, \(Tesla,\) \(Weber m^{-2},\) \(NA^{-1}m^{-1}\)
চৌম্বক ফ্লাক্সের একক ওয়েবার (\(Wb\))। চৌম্বক ফ্লাক্স ঘনত্বের একক \(Wb m ^{ - 2} = T \)
ওয়েরস্টেড তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া আবিষ্কার করেন।
আদিতে ব্যবহৃত চৌম্বক প্রাবল্যের একক 1 Gauss = 10 Tesla, 1 Oersted = \(10^{-6} \)TI
চৌম্বক পদার্থের প্রতি একক আয়তনে চৌম্বক ভ্রামককে চুম্বকায়ন তীব্রতা বলে।
অ্যাম্পিয়ারের সূত্রানুযায়ী, \(\oint \vec B .d \vec l = u_{0} I\)
চার্জের গতিশীলতায় সৃষ্টি হয় তড়িৎ প্রবাহ ও চৌম্বক ক্ষেত্র।
চৌম্বক ক্ষেত্রে গতিশীল একটি চার্জের উপর ক্রিয়াশীল বল, \( \vec F =q( \vec v \times \vec B ) \)
হল ক্রিয়ার সাহায্যে নির্ণয় করা যায় প্রবাহ সৃষ্টিকারী চার্জের প্রকৃতি।
চৌম্বক ভ্রামক \( \vec M\) এবং চৌম্বক ক্ষেত্র \(\vec B\) হলে টর্ক, \( \vec \tau = \vec M \times \vec B\)
লুপের ক্ষেত্রফল যত বেশি হবে চৌম্বক ভ্রামক তত বেশি হবে।
ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের দিক তড়িৎ প্রবাহের বিপরীত দিকে।
স্পিনের মান দুই ধরনের হতে পারে। যথা, স্পিনের সঠিক মান \( + \frac{1}{2}\) অথবা \(- \frac{1}{2}\)
বিনতি, বিচ্যুতি এবং ভূ-চৌম্বক ক্ষেত্রের অনুভূমিক উপাংশ হলো পৃথিবীর ভূ-চুম্বকত্বের উপাদান।
ঢাকার বিনতি \(31^{0} \, N\)
বিষ্ণুবরেখার বিনতির মান \(0^{0}\)
বিনতির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মান \(90^{0} \) ও \(0^{0}\)
প্যারাচৌম্বক পদার্থের ক্ষেত্রে \(µ \gt 1\) ও \(k \lt 1\) হবে।
ডায়াচৌম্বক পদার্থের চৌম্বক প্রবেশ্যতার মান \(µ \gt 1\)।
ডায়াচৌম্বক ও প্যারাচৌম্বক পদার্থে কুরী বিন্দু পাওয়া যায় না।
পানি, পারদ, সোনা, তামা, কাচ ইত্যাদি ডায়াচৌম্বক পদার্থ।
নিকেল ফেরাইট, ফেরোসোফেরিক অক্সাইড (\(Fe_{3}O_{4}\)) একটি ফেরিচৌম্বক পদার্থ।
হিসটেরেসিসের ফলে শক্তির অপচয় ঘটে ও বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
উপসংহার
তড়িৎ প্রবাহের চৌম্বক ক্রিয়া ও চুম্বকত্ব অধ্যায়টি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রযুক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে যোগাযোগব্যবস্থায় এই প্রক্রিয়াগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ও নিয়মগুলো বোঝার মাধ্যমে আমরা ইলেকট্রনিকস, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে গভীর ধারণা লাভ করতে পারি।